ঢামেকে কেউ করোনায় মারা গেছে কি-না, জানা নেই আইইডিসিআরের
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের করোনাভাইরাস আতঙ্ক আর অবহেলায় এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ালেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেছেন বলে আমাদের জানা নেই।
সোমবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআরে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদমাধ্যম জানায়, নাজমা আমিন (২৪) নামে কানাডাফেরত এক স্নাতক শিক্ষার্থী ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি কানাডা থেকে ফিরেছেন বলে করোনাভাইরাস আতঙ্কে চিকিৎসকরা সেবায় অবহেলা করেছেন বলে অভিযোগ তার স্বজনদের।
দেশে এখন পর্যন্ত মোট আট জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডা. ফ্লোরা বলেন, আমরা যেগুলো পরীক্ষা করেছি, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এনে পরীক্ষা করেছি। এই আটজনের বাইরে আর কারও মধ্যে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ঢাকা মেডিকেল থেকে যখনই ফোন করে জানানো হয়, সেখানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের রোগী থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা সেখানে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদের জানিয়ে দেই যে কার করোনা সংক্রমণ রয়েছে কার নেই। তবে কোনো রোগী মারা গিয়েছে কি-না, এই সংক্রান্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দিতে পারবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সন্দেহভাজন এক করোনা রোগী পালিয়েছেন বলে খবর ছড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, বিশেষ কোনো হাসপাতালে কী হয়েছে সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে আমাদের সাথে যেই রোগীর ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়েছিল, আমরা তার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছি, তার মধ্যে করোনা সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নেই।
রোগ নির্ণয়ের রি-এজেন্ট আনার ব্যাপারে কাদের সঙ্গে আইইডিসিআরের যোগাযোগ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে রি-এজেন্ট পাই। ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে রি-এজেন্ট কেনার বিষয়ে কাজ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও আমাদের রি-এজেন্ট দেয়ার ব্যাপারে কাজ করছে। রি-এজেন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ চিন্তাটি বেশি আমার এবং প্রতিষ্ঠানের। সেটি নিয়ে আমরা নিজেরাও কাজ করছি।
করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর কেউ মারা গেলে ওই মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে কোনো রিভিউ কমিটি হবে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ রয়েছে তারা এর সংক্রান্ত তালিকাভুক্ত হবেন। কজ অব ডেথ বের করার বিষয়টি ভিন্ন। আমরা আশা করি কেউ মারা যাবেন না। যদি তেমন কিছু হয়ও, তবে তিনি কী কারণে মারা গেছেন সেটা বিশ্লেষণ করার জন্য আমরা অবশ্যই ক্লিনিক্যাল বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেব।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটি রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে আমাদের রিসেন্ট কন্টাক্ট ট্রেসিং (সম্প্রতি কার সঙ্গে মিশেছে) করতে হয়। কন্টাক্ট ট্রেসিং যদি সঠিকভাবে করা না যায় তাহলে ইনফেকশন কমিউনিটিতে চলে যেতে পারে। এটি এখন পর্যন্ত লোকাল ট্রান্সমিশনে আছে, যেটা আমরা কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মধ্যে পাচ্ছি। যদি আমরা কন্টাক্ট ট্রেসিং প্রোপারলি না করি, এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য এখন পর্যন্ত আমরাই অর্থাৎ আইইডিসিআর একাই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। আইইডিসিআরে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে কারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে সে ব্যবস্থা নেয়া আছে। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সংক্রমণের এমন অবস্থা হয়নি বা সাসপেক্টেড কেসও এমন নয় যে, আইইডিসিআর একা পরীক্ষাগুলো করতে পারবে না। আইইডিসিআর পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো কার্যকরভাবে করতে পারছে।
করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ও হাসপাতালগুলোতে সমন্বয়হীনতার যে অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, সেগুলো নিয়ে আমরা কথাবার্তা বলছি। আজকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমস্ত জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মহাপরিচালক মহোদয় বিষয়টি নিজেই দেখছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সোসাইটির সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলছেন সভা করেছেন।
ডা. ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের নমুনা শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ দেশে নতুন করে আরও তিন জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত তিন জনের মধ্যে একটি ছেলে শিশু, একটি মেয়ে শিশু এবং অপরজন নারী। এদের মধ্যে একজন আগে অসুস্থ হওয়া পরিবারের সদস্য। নতুন আক্রান্তের দুজন লোকাল (প্রবাসী নন)।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেয়া করোনাভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে গত ৮ মার্চ। সেদিন তিন জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানায় সরকারের আইইডিসিআর। পরে আরও দুজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানায় সরকার। এদের মধ্যে তিনজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন, যাদের দুজন বাড়ি ফিরে গেছেন। সবশেষ আরও তিনজন আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানা গেল।
জেইউ/এইচএ/এমকেএইচ