ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বিদেশফেরত যাত্রীদের জন্য হোম কোয়ারেন্টাইনই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ১১:৪৪ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে আসা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের একসঙ্গে দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইন করে রাখা, নাকি প্রত্যেককে নিজ নিজ বাড়িতে স্বেচ্ছায় অন্তরীণ (হোম কোয়ারেন্টাইন) করে রাখা- কোনটি সঠিক পদ্ধতি তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।‌ নতুন এ ভাইরাসটি সম্পর্কে বিশ্বের রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের খুব বেশি অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রতিনিয়তই এতে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নতুন নতুন পরামর্শ আসছে।

শনিবার (১৪ মার্চ) দেশে নতুন করে ইতালি ও জার্মানফেরত দুজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। ইতিপূর্বে ইতালিফেরত দুজন এবং তাদের সংস্পর্শে এসে আরও একজনসহ মোট তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। এ নিয়ে দেশে মোট করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৫ জন রোগী পাওয়া গেল। তবে আগে আক্রান্ত তিনজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাঠিয়ে ৩১২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় চীনের উহান থেকে। ওই সময় তাদেরকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আশকোনা হজক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। তাদেরকে দুই সপ্তাহ একসঙ্গে হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়।

শনিবার সকালে ইতালি থেকে এমিরেটস ফ্লাইট যোগে ১৪২ জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফেরেন। তাদেরকেও চীনের উহান প্রদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা বাংলাদেশি নাগরিকদের মতো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আশকোনা হজ ক্যাম্প নিয়ে আসা হয়। এখন তাদেরকে সেখানে রাখা হবে নাকি নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হবে, তা নিয়ে নানা কথাবার্তা ও পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও রোগতত্ত্ববিদ জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে প্রথমদিকে করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে আসা নাগরিকদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা বলা হলেও, বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইন পদ্ধতিকেই করোনাভাইরাস না ছাড়ানোর সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হিসেবে বলা হচ্ছে।

কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরে আসা নাগরিকদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে একসঙ্গে রাখা হলে তাদের মধ্যে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন তারা এতে আক্রান্ত কারও সঙ্গে থাকলে সংক্রমিত হতে পারেন। কিন্তু হোম কোয়ারেন্টাইনে নিজ বাড়িতে আলাদা থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন বিদেশফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ওপর অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সঠিকভাবে করা কোয়ারেন্টাইনে ‌থাকছেন কি-না তা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে। আর তা না করা হলে স্থানীয়ভাবে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে।

শনিবার সকালে ইতালি থেকে আসা ১৪২ জন নাগরিককে আপাতত আশকোনা হজ ক্যাম্পে রাখা হলেও শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদেরকে নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হবে। তাদেরকে পুলিশি প্রহরায় বিশেষ পরিবহন যোগে বাড়িতে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। তারা যেন নিজ বাড়িতে ১৪ দিন স্বেচ্ছায় অন্তরীণ থাকেন তা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নজরদারি করতে নির্দেশনা প্রদান করা হবে।

বর্তমানে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ইতালি থেকে আসা নাগরিকদের নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ইতালিয়ান প্রবাসী বিমানবন্দর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে না ফেরার আহ্বান জানালেও কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাচ্ছেন না। অনেকেই আক্রান্ত দেশ থেকে দেশে ফিরে আসছেন। আন্তর্জাতিক ট্রাভেল আইন অনুসারে ইচ্ছে করলেই তাদের আসা-যাওয়া বন্ধ করা যায় না। করণা আক্রান্ত দেশ বিশেষ করে ইতালি থেকে যেন বাংলাদেশের নাগরিকরা ফিরে আসতে না পারে সেজন্য এয়ারলাইন্সগুলোকে বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছে ফ্লাইটের টিকিট বিক্রি না করার জন্য তারা অনুরোধ জানিয়েছেন।

এমইউ/এমএসএইচ