অবৈধ জনপ্রতিনিধিদের রাষ্ট্র চালনায় জন-অংশগ্রহণ থাকে না
নির্বাচনকে গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ভােটের মাধ্যমে যিনি প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন, তাকে সত্য মূল্য দিয়েই তার আসনটি লাভ করতে হবে। অবৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারেন না।
সোমবার (২ মার্চ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভোটার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার প্রতিটি আইন-কানুন ও আচরণবিধি কঠোরভাবে পালনের মধ্য দিয়ে শুদ্ধ ও সুন্দর নির্বাচন করে আমরা গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে চাই। ভােট জনগণের পবিত্র আমানত। এই আমানত যেন লুণ্ঠিত না হয়, সেজন্য নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযােগ্য ও বিশ্বাসযােগ্য হওয়া প্রয়ােজন। এজন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংস্কারের প্রয়ােজন রয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় ভােটার দিবস কেবল নির্বাচন কমিশনের নয়, সমগ্র জাতির জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ মহান দিন। এ দিন হালনাগাদ ভােটার তালিকা প্রকাশিত হয় এবং একজন ব্যক্তির নাগরিকত্বের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সোমবার দ্বিতীয়বারের মতাে দেশব্যাপী দিবসটি উপযাপিত হচ্ছে উল্লেখ করে মাহবুব বলেন, গত বছর প্রথম জাতীয় ভােটার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘ভােটার হব, ভােট দেব’। এবার দ্বিতীয় জাতীয় ভােটার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ভােটার হয়ে ভােট দেব, দেশ গড়ায় অংশ নেব’। অর্থাৎ ভােটার হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা একধাপ এগিয়ে গেছে। ভােটার হিসেবে এখন আমরা উন্নয়নের অংশীদার হতে চাই। এ কথায় অনিবার্যভাবে আমাদের মনে যে প্রশ্ন আসে। তা হচ্ছে, যাকে ভােট দেয়া হলাে, তিনি দেশ গড়ায় কতটুকু আত্মনিবেদিত হবেন? জাতীয় ভােটার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ের মর্মবাণী হচ্ছে, যােগ্য ব্যক্তিকে ভােট দিয়ে দেশগড়ায় অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন।
তিনি বলেন, সংবিধানের রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অংশে বলা হয়েছে, ‘প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে’। এ কথার অর্থ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্রক্ষমতায় অংশগ্রহণ করবে।সেজন্যই একটি গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন এত গুরুত্বপূর্ণ।
মাহবুব তালুকদার বলেন, ভােট দুই অক্ষরের ছােট শব্দ হলেও এর ব্যাপ্তি অত্যন্ত বিস্তৃত, বিশাল ও ব্যাপক। ভােট জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রতীক ও জনগণের রক্ষাকবচ। সম্প্রতি ভােটারদের ভােটবিমুখ হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। এর কারণসমূহ বিশ্লেষণ করে তা প্রতিকারের প্রচেষ্টা চালানাে প্রয়ােজন। যে কোনাে মূল্যে আইনানুগভাবে ভােটের প্রতি ভােটারদের আস্থার সংকট মােচন করতে হবে। ভােটাররা অবারিতভাবে ভােটকেন্দ্রে গিয়ে ইচ্ছা অনুযায়ী ভােট দেবেন। ভোট দিতে পারলেই কেবল জাতীয় ভােটার দিবস পালনের উদ্দেশ্য সফল হবে।
এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন কমিশনের দুটি অর্জন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে বায়ােমেট্রিক পদ্ধতিতে ভােটার নিবন্ধন ও তালিকা তৈরি। এটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডার ও দেশের এক অনন্য সম্পদ। মনে রাখা প্রয়ােজন যে, নির্ভুল ভোটার তালিকা না হলে এ নির্বাচন সম্ভব নয়। অন্য অর্জন হচ্ছে, ভােটারদের স্মার্টকার্ড দেয়া। প্রতিটি স্মার্টকার্ডধারী ব্যক্তি দেশের পূর্ণ নাগরিক হিসেবে গৌরব অনুভব করতে পারেন। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্ডটি তার আত্মপরিচয়ের স্মারক। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা পা বাড়িয়েছি। সেটি হচ্ছে, প্রবাসীদের ভােটার হিসেবে নিবন্ধন। ইতােমধ্যে যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরের প্রবাসীদের ভােটার নিবন্ধনের আওতায় আনার কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে।
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। আরও অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের এতে সভাপতিত্ব করেন।
এইচএস/এইচএ/এমকেএইচ