করোনাভাইরাস : সতর্ক বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো
করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ আতঙ্কে পুরো বিশ্বের সাথে বাংলাদেশও অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। দেশে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতেও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
বিদেশিদের বাংলাদেশের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সম্প্রতি চীন থেকে ফিরেছেন এমন ব্যক্তিদের ভিসা দেয়া থেকে বিরত থাকছে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো। দূতাবাসের পরিষেবাও যতটা সম্ভব অনলাইনে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
দূতাবাসের কার্যক্রম ঠিক রেখে নিজেদের যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। তাদেরকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বের হলেও মাস্কসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে চীন, সিঙ্গাপুর, জাপানসহ যেসব দেশে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে সেসব দেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোকে এসব নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেখুন, করোনার বিষয়ে আমাদের মিশনগুলোকে অত্যন্ত সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ, এ ভয়াবহ ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে আমাদের মতো দেশের তা মোকাবিলা করা অত্যন্ত কঠিন হবে। চীনের মতো শক্তিশালী দেশই যেখানে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে।’
চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমরা এখানে এক ধরনের ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। তবে এ ভাইরাস প্রতিরোধে চীন সরকারের সব ধরনের নির্দেশনা আমরা মেনে চলছি। পাশাপাশি বাংলাদেশি কমিউনিটিকেও একই পরামর্শ মেনে চলতে অনুরোধ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের পাশাপাশি চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। যারাই দূতাবাসে যোগাযোগ করছেন, আমরা চেষ্টা করছি তাদের পাশে থাকতে।’
চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুব উজ জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমরা চীনা নাগরিকদের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সচেতন রয়েছি। কোনো চীনা নাগরিক বাংলাদেশের ভিসার জন্য আবেদন করলে মেডিকেল রিপোর্টের মাধ্যমে সুস্থতার প্রমাণ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জাপান দূতাবাসে কর্মরত একজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্প্রতি চীন সফর করেছেন- এমন বিদেশিদের বাংলাদেশের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে মেডিকেল রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ সেই প্রমাণ দেখানোর পরেই ভিসা দেয়া হচ্ছে। তবে ভিসা আবেদন অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা কম।’
তিনি জানান, ‘বর্তমানে দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মার্চের জাপান সফর নিয়ে ব্যস্ত। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের সতর্কতা মেনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে পাঁচজন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে একজন বাংলাদেশির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে সিঙ্গাপুরে একজনের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন সেখানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এ বিষয়ে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমরা দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করছি। বিদেশিদের বাংলাদেশের ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক রয়েছি। তবে করোনাভাইরাস আতঙ্কে বর্তমানে সবাই সফর কম করছেন। ফলে ভিসা আবেদনও অনেক কম।’
এদিকে চীনের পর করোনাভাইরাসের প্রভাব বিস্তার করা দ্বিতীয় দেশ সিঙ্গাপুর। ফলে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। সেই ধারাবাহিকতায় সত্যায়িত করার জন্য কাগজপত্র সরাসরি জমা না দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন। এমনকি এসব কার্যক্রমের ফিও ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ থেকে প্রকোপ ছড়ানো করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা এখনও প্রতিদিনই বাড়ছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) চীনে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০৯ জন। ফলে সেখানে এ ভাইরাসে মোট প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৪৫ জন। এছাড়া চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত আরও ১৫ জন।
শনিবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) জানিয়েছে, শুক্রবার মৃতদের মধ্যে ১০৬ জনই করোনাভাইরাসের উৎস হুবেই প্রদেশের। সেখানে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ২ হাজার ২৫০ জন।
করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা বেশিরভাগই চীনে হলেও গত এক সপ্তাহ ধরে অন্যান্য দেশেও এর সংখ্যা বাড়ছে। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে এখন পর্যন্ত ইরানে চারজন, জাপানে তিনজন, হংকং ও দক্ষিণ কোরিয়ায় দু’জন করে এবং তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ফ্রান্স ও ইতালিতে একজন করে মারা গেছেন।
শুক্রবার চীনে নতুন করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ৩৯৭ জন। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৬ হাজার ২৮৮ জন। আর বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৭ হাজার ৭৬৭ জন।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার আরও ২ হাজার ৩৯৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। ফলে দেশটিতে রোগমুক্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ২০ হাজার ৬৫৯ জন।
জেপি/আরএস/পিআর