ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কতটুকু প্রস্তুত বাংলাদেশ?

মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল | প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ। এ ভাইরাসটি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। এছাড়া এখন পর্যন্ত চীন থেকে বাংলাদেশে আসা কারো শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।

গত ২১ জানুয়ারি থেকে আজ ৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮টা পর্যন্ত সরাসরি চীন ও বিভিন্ন দেশ হয়ে চীনা নাগরিকসহ সর্বমোট ৭ হাজার ৮২৯ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। সর্বশেষ আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে চীন থেকে ১৩৬ জন দেশে ফিরেছেন। দেশে ফেরত যাত্রীদের মধ্যে ৫৭ জনের জ্বর ও কাশি থাকায় তাদের লালার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে তাদের কারও দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।

চীনে ভয়াবহ ছোঁয়াচে এ রোগে ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত এবং ৫৬৪ জনের মৃত্যু হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক রয়েছে। তাদের মনে প্রশ্ন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ন্ত্রণে কি স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত?

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের রোগী এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আমরা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলেও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। রোগী শনাক্ত হলে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে সুচিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২১ জানুযারি থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন ফ্লাইটে চীন ফেরত সকল যাত্রীদের থার্মাল ও হ্যান্ড স্ক্যানারে পরীক্ষা, স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ, বাংলাদেশে অবস্থানের নাম ঠিকানা, স্বেচ্ছায় আত্মবন্দি থাকার অঙ্গীকার নামা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১৯ জন চিকিৎসকসহ নার্স ও সহযোগী স্টাফরা পালাক্রমে তিন শিফটে বিমানবন্দরে আগত যাত্রীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন। শাহজালালে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে। বিমানবন্দর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে আগত যাত্রীদেরও হেলথ স্ক্রিনিং করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা হাজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন ভবন খোলা হয়েছে। সাতটি ডরমিটরিতে চীন ফেরত যাত্রীরা অবস্থান করছেন। চিকিৎসাসেবা ও নার্সিং সেবা কার্যক্রমকে সেনা কর্তৃপক্ষের মেডিক্যাল সার্ভিস সম্পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সকল প্রকার ওষুধ সরবরাহ করছে, জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধ কেনা হচ্ছে। আইইডিসিআর স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও যাত্রীদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে। সামরিক বাহিনীর মিলিটারি পুলিশ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন।

Hajj-Camp

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সবার খাবার, শিশুদের ডায়াপার ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অফিস কোয়ারেন্টাইন ভবনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশক নিধনসহ ক্যাম্পের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ পুলিশ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের চারপাশে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনে অবস্থিত বাংলাদেশের নাগরিকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

এছাড়া কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২৫০ শয্যার আইসোলশেন কক্ষ, সকল মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুতসহ প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী গ্রহণ করার সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে চীনের উহান থেকে আগত ৩১২ জনের মধ্যে ৩০৩ জনকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকি ৯ জনের মধ্যে একজন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং ৮ জনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনে ২৭ হাজার ৭০৭ জনসহ বিশ্বের ২৮টি দেশে সর্বমোট ২৮ হাজার ১৪৪ জন আক্রান্ত এবং ৫৬৪ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে চীনে মারা গেছেন ৫৬২ জন।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিক সিআর) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, চীনের বাইরে নিশ্চিত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আছেন ২৩টি দেশের ১৫৯ জন (গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন), মৃত্যুবরণ করেছেন ১ জন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়নে ঝুঁকির মাত্রা চীনে অতি উচ্চ, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উচ্চ এবং সারা বিশ্বে উচ্চ।

চীনের জাতীয় পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়, চীনের সব রোগীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ হুবেই প্রদেশের। রোগীদের মাঝে মৃত্যুহার চীনে ২.১ শতাংশ, হুবেই প্রদেশে ৩.১ শতাংশ। এছাড়া রোগীদের মাঝে ৮০ শতাংশই ৬০ বছরের বেশি বয়সী এবং মৃত্যুবরণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ।

এমইউ/আরএস/জেআইএম