ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

করোনাভাইরাস ঠেকাতে চট্টগ্রাম বন্দর ও শাহ আমানতে উচ্চ সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০৬:২৯ পিএম, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলমান সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত আছেন প্রায় ২০ হাজার চীনা নাগরিক। কিন্তু ৩১ জানুয়ারি চীনা নববর্ষ হওয়ায় যাদের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বর্তমানে নিজ দেশে অবস্থান করছেন। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশটির এসব নাগরিক নববর্ষ উদযাপন শেষে বাংলাদেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়া হয়েছে উচ্চ সতর্কতা।

করোনাভাইরাস নিয়ে দুই স্তরের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলো- থার্মাল ও কোয়ারেন্টাইন টেস্টের ব্যবস্থা। একই সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে আগত জাহাজসমূহের ক্ষেত্রে বন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ শর্তারোপ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে বন্দর মেডিকেল বিভাগের বিশেষ টিম ও সি-অ্যাম্বুলেন্স।

এদিকে করোনাভাইরাস ঠেকাতে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরুতে দুই সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছিল। সম্প্রতি এ টিমের সদস্য সংখ্যা ৬ জন করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য পেতে বিমানবন্দরে খোলা হয়েছে বিশেষ ‘তথ্যকেন্দ্র’।

চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম শফিউল বারী বলেন, ‘সমুদ্র পথে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বহির্নোঙরে জাহাজসহ ক্যাপ্টেন এবং এজেন্ট কর্তৃপক্ষ আসার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে যথাযথ ঘোষণা প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বন্দরে আগত জাহাজের মাস্টারকে পোর্ট লিমিটে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা প্রদান করতে হবে তার জাহাজে করোনাভাইরাস আক্রান্ত নাবিক নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার দেশ থেকে আগত জাহাজসমূহে ১০০ ভাগ নাবিক পোর্ট হেলথ অফিসার থেকে স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ ঘোষণা হলেই বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের এ সদস্য জানান, ‘যেকোনো জরুরি মুহূর্তে জাহাজ থেকে হাসপাতালে দ্রুত স্থানান্তরের জন্য বন্দরের অ্যাম্বুলেন্স শিপকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্দর ইমিগ্রেশন ডেস্কে পোর্ট হেলথ অফিসারের তত্ত্বাবধানে একটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। কোনো নাবিক বাইরে যেতে চাইলে মেডিকেল স্ক্যানিংয়ে সুস্থতা সাপেক্ষে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে।’

এদিকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ২০ জানুয়ারি থেকেই আমরা (শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ) করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে আছি। সর্বশেষ গত শুক্রবার আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসকদের ৬ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা প্রতিদিন দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন।’

jagonews24

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের সঙ্গে চীনের সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। মূলত ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে চীনা নাগরিকরা চলাচল করে থাকেন। তাই চীনা নাগরিকদের কেউ যদি শাহজালাল হয়ে অভ্যন্তরীণ রুটেও চট্টগ্রাম আসে, সেক্ষেত্রে শাহজালালে তার সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আমরা ম্যানুয়ালি পরীক্ষা করছি যাত্রীদের। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ইতোমধ্যেই থার্মাল স্ক্যানার রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

উইং কমান্ডার সারোয়ার ই জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত চীন থেকে সরাসরি বা অন্য কোনো দেশ হয়ে কোনো চীনা নাগরিক চট্টগ্রাম আসার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। শুধুমাত্র গত বৃহস্পতিবার একজন কোরিয়ান নাগরিক দুবাই হয়ে শাহ আমানতে আসেন। তাকে পরীক্ষা করে কিছু পাওয়া যায়নি।’

গত ১৯ জানুয়ারি থেকে চীনে নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। নতুন বছর সামনে রেখে গত ১০ জানুয়ারি থেকে বিপুলসংখ্যক চীনা নাগরিক তাদের দেশে যান। ৩১ তারিখ নববর্ষের ছুটি শেষ হওয়ায় এখন তারা ফিরতে শুরু করবেন। এসব বিবেচনায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড), কর্ণফুলী রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড), কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প, আনোয়ারা চীনা ইকোনমিক জোন, মীরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পসহ নগরের বিভিন্ন তৈরি পোশাক খাত, কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল, ওভেন ও নিটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি, সোয়েটার ফ্যাক্টরি, বায়িং হাউস, মার্চেন্ডাইজিং এবং ফ্যাশন ডিজাইনে প্রায় ২০ হাজার চীনা নাগরিক কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে একটি বড় অংশের বসবাস চট্টগ্রাম নগরের খুলশী আবাসিক এলাকায়।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্ব-স্ব সংস্থাকে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের আপাতত নিজ দেশে যাওয়ার বিষয়টি নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া তাদের মধ্যে কেউ নিকটতম সময়ের মধ্যে চীনে গিয়েছিলেন কি না, দেশে ফেরার পর তাদের মধ্যে জ্বর কিংবা অন্যান্য কোনো উপসর্গ দেখা দিয়েছে কি না সেই বিষয়ে তথ্য নিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শুরুতেই আমরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও ইপিজেডগুলোতে কত সংখ্যক চীনা নাগরিক আছেন সে তথ্য জোগাড় করছি। বিশেষ করে, গত দুই সপ্তাহের মধ্যে যারা চীন থেকে এসেছেন তাদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। যেসব প্রতিষ্ঠানে চীনা নাগরিকরা বর্তমানে কাজ করছেন তাদেরকে দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করছি। আবার যারা ইতোমধ্যে চীনে গেছেন আপাতত তাদেরও বাংলাদেশে না ফেরার জন্য বলা হচ্ছে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে। যদি কেও আসেন তাহলে তাঁকে যথাযথভাবে স্ক্যানিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

প্রস্তুতির কথা জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চট্টগ্রামের তিনটি হাসপাতালে পৃথক বিশেষায়িত কক্ষ করা হচ্ছে। হাসপাতাল তিনটি হলো- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতাল। প্রতিটি কক্ষে পাঁচ শয্যার ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর থেকে চীনে মাহামারি আকার ধারণ করা এই ভাইরাস। এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও কমপক্ষে ১৪ হাজার ৫৫১ জন।

মহামারি এ ভাইরাসে ২১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা পর্যন্ত চীন থেকে মোট পাঁচ হাজার ৫৪৬ চীনা নাগরিক ও বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) চীনের উহান প্রদেশ থেকে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ৩১২ বাংলাদেশি।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে চীনের নাগরিকদের অন-অ্যারাইভাল ভিসা দেয়া সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ।

ক্রমেই এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী। চীনের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের ২৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৩০ জন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও দু'জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। নিউজিল্যান্ড, হংকং ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ চীন ফেরত বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

আবু আজাদ/এফআর/এমকেএইচ