এখনও শুরু হয়নি বিজিএমইএ ভবন ভাঙার মূল কাজ
দীর্ঘদিন আলোচনায় থাকা বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন গত ২২ জানুয়ারি ভাঙার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন হলেও ভবন ভাঙার মূল কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ।
কারওয়ান বাজার সংলগ্ন হাতিরঝিল অংশে বিজিএমইএ ভবন যান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতীকীভাবে ভাঙার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ জানিয়েছিল ২৭ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে ভবন ভাঙার মূল কাজ শুরু হবে। তবে ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণ দেখিয়ে তারা এখনও মূল কাজ শুরু করতে পারেনি।
জানা গেছে, এখন শুধু ১৬ তলা ভবনের ওপরের দুটি তলায় থাকা আবর্জনা ও পরিত্যক্ত কাগজপত্র পরিষ্কার করা হয়েছে। ভাঙার জন্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন। কিন্তু সে সংযোগ এখনো পাওয়া যায়নি। তাই তারা কাজ শুরু করতে পারেনি।
ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের পক্ষে বলা হয়, বৈদ্যুতিক সংযোগের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। প্রথম দিন জেনারেটর দিয়ে ভবন ভাঙার কাজের উদ্বোধন করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ পেলেই মূল কাজ শুরু হবে।
ভবন ভাঙার কাজ পরিচালনা করবে দুই টিম
ভবন ভাঙার কার্যক্রম পরিচালনা এবং দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে দুটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ভবন ভাঙার কাজ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করবে। দুই টিমের একটি হলো টপ সুপারিভিশন কমিটি। এ টিমে রয়েছে রাজউক, বুয়েট, ফায়ার ব্রিগেড, প্রকল্প কর্মকর্তা (সেনাবাহিনী, ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড), অথরাইজড অফিসার (রাজউক), হাতিরঝিল প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক।
এছাড়া সার্বক্ষণিক তদারকি কমিটিতে রয়েছে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক, হাতিরঝিল প্রকল্প কর্মকর্তা (সেনাবাহিনী, ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড) এবং হাতিরঝিল প্রকল্প ব্যবস্থাপক।
এর আগে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ভবনটি ভাঙার দরপত্র আহ্বানের পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাঙতে কাজ পায় ‘সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকার। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও দেয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। যদিও শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নেয় রাজউক।
তারা সরে যাওয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ‘ফোর স্টার’ গ্রুপকে কাজ দেয় রাজউক। তাদের দরপত্রে টাকার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৫ লাখ। তবে এখন এক কোটি দুই লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।
যে কারণে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভাঙা হচ্ছে বিজিএমইএ ভবন
প্রথমে কন্ট্রোল ডিমোলেশিং (নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ) পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিল রাজউক। তবে পরে তা থেকে সরে এসে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়।
নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার ঘোষণা দেয়ার সময় এক চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কথা বলেছিল রাজউক। কিন্তু পরে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভবন ভাঙতে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
প্রথমদিকে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেছিলেন, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ প্রক্রিয়ায় ভবনটি অপসারণ করা হবে। এ বিষয়ে চাইনিজ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তিনি আবার বলেন, প্রথমে নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার চিন্তা করা হচ্ছিল। কিন্তু সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে যান্ত্রিক পদ্ধতি বেছে নেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার পক্ষেই রাজউক। কারণ নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙাতে হলে বিদেশি সাহায্যের দরকার। এতে যে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হবে, সে টাকা বিদেশে চলে যাবে। আর যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভবন ভাঙলে রাজউকের আয় হবে। পাশাপাশি যারা ভবন ভাঙার কাজ পাবেন তারাও লাভবান হবেন।
ছয় মাসে ভাঙা হবে ভবন
গত ২২ জানুয়ারি বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনকালে গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলো। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। বিজিএমইএ ভবন নয়, হাতিরঝিলে সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হবে।
ভবন ভাঙার শর্ত
ভবন ভাঙার শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাজটি ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ভবনের চারদিকে সেফটি কভার ও নেটিং ব্যবহার এবং সেফটি স্টিল ব্রাকেট স্থাপন করে মালামাল ব্যবহার করতে হবে। ভবন ভাঙার কাজে ব্যবহৃত প্রস্তাবিত/নিয়োজিত মেশিনারিজগুলোর চলাচল, নিয়ন্ত্রণ ও কাজ করা অবস্থায় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভবন ভাঙার সময় কোনো শ্রমিক আহত বা নিহত হলে রাজউক কোনো দায় বহন করবে না। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান সব দায় নেবে। ভবন ভাঙার সময় সার্বক্ষণিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে। এছাড়া অক্সিজেন গ্যাস ও অক্সিজেন মুখোশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত সর্বশেষ গত বছরের ১২ এপ্রিলের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। এরই প্রেক্ষিতে সময় পার হওয়ার পর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ১৬ এপ্রিল মাঠে নামে রাজউক।
এরপর বিজিএমইএ ভবনে অভিযান চালায় রাজউক। প্রথম দিনই ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সময় দিয়ে পরবর্তীতে ভবনটি সিলগালা করা হয়। পরে অবশ্য আরও কয়েক দফায় মালামাল সরানোর সুযোগ দেয়া হয়।
২০০৬ সালের দিকে হাতিরঝিলে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিজিএমইএ ভবন অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয় গত ১২ এপ্রিল। ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে বিজিএমইএকে এক বছর ১০ দিন সময় দেন।
এএস/এএইচ/এমএস