প্রেস পাড়ায় দম ফেলার ফুরসত নেই
কয়েক দিন পরেই অমর একুশে বইমেলা। প্রেস পাড়াগুলোতে তাই দিন-রাত খটখট আওয়াজ। পুরোদমে চলছে বই ছাপানোর ব্যস্ততা। দম ফেলার ফুরসত নেই শ্রমিকদের। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। বইমেলাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বাংলাবাজারে চলছে এই কর্মযজ্ঞ। প্রতিটি ছাপাখানায় কাগজ ও কালির স্তূপ।
বইয়ের পাড়া বাংলাবাজারে প্রকাশক থেকে শুরু করে মুদ্রণ, বাঁধাই ও পরিবহনসহ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাংলাবাজারের কয়েকটি ছাপাখানা ঘুরে দেখা যায়, কারোর কথা বলার সময় নেই। নতুন বই ছাপাতে ধুন্ধুমার ব্যস্ততা। গত ২৫ জানুয়ারির পর নতুন বই ছাপানোর ফরমায়েশও নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।
প্রেস মালিকরা জানান, ছাপাখানাগুলোতে গত ডিসেম্বর থেকে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে ব্যস্ততা। জানুয়ারির ২০ তারিখের পর অনেকেই ২৪ ঘণ্টা প্রেস খোলা রেখে দুই শিফটে কাজ করাচ্ছেন। ফেব্রুয়ারি শেষ হলেই তাদের ব্যস্ততা শেষ নয়, অনেকে বইমেলা শেষে অনলাইনে বই বিক্রি করে। তাই গত কয়েক বছর ধরে মার্চেও মুদ্রণের কাজ করছেন তারা।
পুরান ঢাকার প্যারিদাস রোডে গিয়ে দেখা গেল সারি সারি ভ্যানগাড়ি। এগুলোতে প্রেসের সাদা কাগজ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার কয়েকটি ভ্যানগাড়িতে ছাপা হওয়া কাগজ বাঁধাইয়ের জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ফেইথ প্রিন্টিং প্রেসের মালিক মো. এমদাদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এনসিটিবির সরকারি বই ছাপানোর কাজও করি। পাশাপাশি এবারের বইমেলায় নিজেদের প্রকাশনা ভূমি প্রকাশ ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর ১০-১৫টি বই ছাপানোর কাজ করছি। আমাদের সারা বছরই ব্যস্ততা থাকে। তবে মেলার আগে ব্যস্ততা একটু বেশিই থাকে।
টিকাটুলির বিএম এন্টারপ্রাইজের মালিক মমিনুর রহমান আইয়ুব বলেন, আমরা শিশুদের সিসিমপুর ওয়ার্কশপের বই ছাপাচ্ছি। দিনরাত ছাপানোর কাজ করছি। এসব বইয়ে শিশু ও অভিভাবকদের আগ্রহ অনেক বেশি, বিক্রিও বেশি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বই ডেলিভারির জন্য দিনরাত কাজ করছি আমরা।
প্রিন্টার্স মালিকরা আরও জানান, বছরের বেশিরভাগ সময় বসে থাকলেও বইমেলার কারণে ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ সেট করে বই ডেলিভারি দিচ্ছি। সব মিলিয়ে কাজের চাপ অনেক। সবাই সারারাত কাজ করছে, তাদের ওভারটাইম দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য মাসের চেয়ে শ্রমিকরাও নিয়মিত বেতনের চেয়ে ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়তি আয় করেন। ছাপানোর এই চাপ মেলা শুরু হওয়ার ১৫-২০ দিন পর্যন্ত থাকবে।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এবারের মেলায় ৫৩৮টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলায় ৪১১টি প্রতিষ্ঠান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৭টি প্রতিষ্ঠানসহ, মোট ৮৭২টি ইউনিটে বুক স্টল দেবে। এছাড়া বইমেলা প্রাঙ্গণে থাকছে শিশু চত্বর, মসজিদ, টয়লেট ব্যবস্থাপনা, ফুড পার্ক ও প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র।
এদিকে বইমেলা উপলক্ষে এক নিরাপত্তা সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, অমর একুশে বইমেলাকে ঘিরে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন বই মেলায় থাকবে না। বইপ্রেমীরা বইয়ের ক্ষুধা বইমেলা থেকে বই কিনে মেটান। তাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
বইমেলায় বই মনিটরিংয়ে থাকবে মনিটরিং কমিটি। বইমেলার নিরাপত্তায় ৩০০টির অধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বাঁশ ও টিন দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণ শক্ত করে বেষ্টনী দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি বুক স্টলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে প্রকাশকদের বলা হয়েছে।
এআর/এমএসএইচ/পিআর
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ ফ্যাসিস্টদের মুখোমুখি হতে ভয় পেলে নতুন বাংলাদেশ গড়া যাবে না: সারজিস
- ২ চলমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান হাসনাতের
- ৩ মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ
- ৪ মিডিয়ার চোখে র্যাব-জনগণের প্রত্যাশা বিষয়ে সেমিনার
- ৫ সরকারি কর্মচারীদের শুধু নিজের সুবিধা বৃদ্ধির কথা ভাবলে চলবে না