ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ই-পাসপোর্ট শুরুর গল্প

রোকুনুজ্জামান সেলিম | প্রকাশিত: ১০:২৮ এএম, ২২ জানুয়ারি ২০২০

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বিতরণ শুরু হয়। এক দশক পার না হতেই ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথবারের মতো ই-পাসপোর্ট প্রদানের ঘোষণা দেন। সেই লক্ষ্যে নানা প্রক্রিয়া শেষে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডোসের সঙ্গে চুক্তি করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।

বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রধান অঙ্গীকার ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করা। এবার সে লক্ষ্যে আরও এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে চালু হচ্ছে ই-পাসপোর্ট। 

বাংলাদেশে হাতে লেখা পাসপোর্ট থেকে যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বা এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) প্রবর্তনের পর এখনও এক দশক পার হয়নি। তবে এবার নাগরিক ভোগান্তি কমাতে এবং একজনের নামে একাধিক পাসপোর্টের প্রবণতা বন্ধে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট চালু হলো

২০১৮ সালের ২১ জুন প্রকল্পটি একনেকে সায় পায়। এর আগে ২০১৬ সালে ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ- ২০১৬ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় জার্মানির ‘ভেরিডোস জিএমবিএইচ’ এর সঙ্গে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়।

২০১৭ সালের ১০ থেকে ২২ আগস্ট মোট ১২ দিন সুরক্ষা সেবা বিভাগের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি মোট ছয়টি দেশের পাঁচটি কোম্পানি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে কমিটি ১০ অক্টোবর (২০১৭) প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের বিষয়ে নির্দেশনা দেন।

২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর স্পেসিফিকেশনের জন্য টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। ছয় মাস পর ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে।

প্রতিবেদন দাখিলের পরদিন, অর্থাৎ ২০ এপ্রিল সুরক্ষা সেবা বিভাগ জি-টু-জি কমিটি গঠন করে। প্রায় এক মাস পর ১৪ মে (২০১৮) জি-টু-জি কমিটি তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দাখিল করে। এর একদিন পর ১৬ মে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (সিসিইএ) জি-টু-জি কমিটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন অনুমোদন দেয়া হয়। ওই অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জুন (২০১৮) জার্মানির ভেরিডোস কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি টেন্ডার আহ্বান করা হয়।

টেন্ডার আহ্বানের ১০ দিন পর ২১ জুন একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশে ‘ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। ২৪ জুন ‘ভেরিডোস জিএমবিএইচ’ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছে তাদের টেন্ডার প্রস্তাব উপস্থান করে।

টেন্ডার উপস্থাপনের পর ২৫ থেকে ২৯ জুন (২০১৮) পাঁচদিন চুক্তিপত্র বিশ্লেষণ ও নেগোসিয়েশন করে টেকনিক্যাল মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি)। ১১ জুলাই (২০১৮) ক্রয়-সংক্রান্ত কমিটি (সিসিজিপি) অনুমোদন দেয় এবং ১৯ জুলাই (২০১৮) ‘বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প জি-টু-জি প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডেসের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে বহির্গমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর।

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। চুক্তি অনুযায়ী তিন কোটি ই-পাসপোর্ট সরবরাহ করবে জার্মানির এ প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট জার্মানিতে তৈরি হবে। বাকি দুই কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বই মুদ্রণের জন্য তারা কাঁচামাল সরবরাহ করবে, যা দেশে ছাপানো হবে।

ই-পাসপোর্ট ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে নানা কারণে তারিখ পরিবর্তন হয়। পরে ২৮ নভেম্বর থেকে ই-পাসপোর্ট চালুর কথা বলা হয়। নতুন নির্ধারিত তারিখেও দেশের জনগণের হাতে ই-পাসপোর্ট তুলে দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বুধবার থেকে চালু হচ্ছে ই-পাসপোর্ট বিতরণ কার্যক্রম।

ডিজিটাল বাংলাদেশের নতুন অধ্যায়ের শুরুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হাতে সর্বপ্রথম ই-পাসপোর্ট তুলে দেয়া হবে। এরপর ধাপে ধাপে সারাদেশে ই-পাসপোর্ট বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

e-passport-two

বুধবার (২২ জনিুয়ারি) উদ্বোধনের দিন থেকে দেশের তিন স্থানে চালু হচ্ছে ই-পাসপোর্ট বিতরণ কার্যক্রম।

অভিবাসন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের (ডিপিআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ জানান, প্রথম ধাপে রাজধানীর আগারগাঁও, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে। পরবর্তীতে সারাদেশের পাসপোর্ট কার্যালয় থেকে ই-পাসপোর্ট ধাপে ধাপে দেয়া হবে।

বাংলাদেশে দুই ধরনের ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে। একটি ৪৮ পাতার, অন্যটি ৬৪ পাতার। সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরির জন্য তিন ধরনের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে।

৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদের সাধারণ পাসপোর্টের ফি ৩৫০০ টাকা, জরুরি পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা এবং অতি জরুরি বাবদ সাড়ে সাত হাজার টাকা ফি দিতে হবে। এছাড়া ৪৮ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদের ক্ষেত্রে সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরি ফি যথাক্রমে পাঁচ হাজার, সাত হাজার ও নয় হাজার টাকা।

একইভাবে ৬৪ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদের সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, জরুরি সাত হাজার ৫০০ এবং অতি জরুরি বাবদ ১০ হাজার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ৬৪ পৃষ্ঠার ১০ বছর মেয়াদের ক্ষেত্রে সাধারণ, জরুরি ও অতি জরুরি ফি যথাক্রমে সাত হাজার, নয় হাজার ও ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাধারণ পাসপোর্ট থেকে ই-পাসপোর্টের পার্থক্য হলো- এতে মোবাইল ফোনের সিমের মতো ছোট ও পাতলা আকারের ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ যুক্ত থাকবে। এ চিপ পাসপোর্টের একটি বিশেষ পাতার ভেতরে স্থাপন করা থাকবে। ফলে পাতাটি সাধারণ পাতার চেয়ে একটু মোটা হবে। চিপে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য বিশ্লেষণ করে পাসপোর্ট বহনকারীর পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। এছাড়া ই-পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে সত্যায়নের ঝামেলা থাকবে না বলেও জানানো হয়েছে।

ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ায় একজনের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে অন্য কেউ আর পাসপোর্ট করতে পারবেন না। ফলে পাসপোর্ট নকল হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। সাধারণ পাসপোর্টের তুলনায় ই-পাসপোর্টে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও বেশি। এতে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অনেকগুলো লুকায়িত অবস্থায় থাকবে।

আরএস/এমএআর/জেআইএম