ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

অবসর দীর্ঘ হলো না মোয়াজ্জেম আলীর

কূটনৈতিক প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:২১ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯

ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব শেষ করে দেশে ফিরেছিলেন দিন দশেক আগে। নিয়েছিলেন অবসর। কিন্তু সে অবসর তার দীর্ঘ হলো না। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) পরপারে পাড়ি জমান সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও ভারতে বাংলাদেশের সদ্যবিদায়ী হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী।

সোমবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন মোয়াজ্জেম আলী

তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পরররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ অন্যরা।

এর আগেও একবার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী চাকরি থেকে অবসর নেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে ভারতে হাইকমিশনারের দায়িত্ব নেন তিনি। পাঁচ বছর সেখানে দায়িত্ব পালন করে গত ২০ ডিসেম্বর দেশে ফেরেন তিনি।

মরহুম মোয়াজ্জেম আলীকে স্মরণ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একজন দক্ষ কূটনীতিক অবসরে যাওয়ার অনেক দিন পরে আবার দেশের কাজে ফেরত এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ডাকে। মাত্র ১০ দিন হলো সেই দায়িত্ব শেষ করেছেন।’

মরহুমের জান্নাত কামনা করে প্রতিমন্ত্রী লেখেন, ‘বিদায় সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। আল্লাহতায়ালা আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। মুক্তিযুদ্ধকালে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে বাংলাদেশের পক্ষে মতামত তৈরিতে অবদানের কথা আমরা ভুলবো না।’

‘অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে, আমি ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে ঋণী। আরও অনেক কিছু জানার এবং শোনার ছিল, কিন্তু কাউকেই সেই সুযোগ তিনি দিলেন না।’

মরহুমের বন্ধু ও সমসাময়িক আরেক রাষ্ট্রদূত মহিউদ্দিন আহমেদও ফেসবুকে মোয়াজ্জেম আলী সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তার অবদানের কথা স্মরণ করে মহিউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, ‘আমার এক বছরের জুনিয়র, মোয়াজ্জেম ১৯৬৮ ব্যাচের তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি আমাদের কূটনৈতিক ফ্রন্টের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’

‘তিনি তখন ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে একজন তৃতীয় সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ওয়াশিংটনে তখন ডেপুটি চিফ অব মিশন এনায়েত করীম সাহেব, কিবরিয়া সাহেব, মুহিত সাহেবরাও একযোগে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। জেদ্দায় তিনি আমাদের কনসাল জেনারেল এবং ভুটান, ইরান ও ফ্রান্সেও আমাদের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।’

মহিউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, ‘আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোয়াজ্জেমকে লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১ সালে শপথ নিয়েই ফরেন সেক্রেটারির পদ থেকে সরিয়ে অপদস্থ করেছিল। মোয়াজ্জেমকে তখন ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল করা হয়। ওই এক রাতেই আরও ১২-১৪ জন সচিবকে তাদের পদ থেকে সরানো হয়েছিল। অবসর জীবন থেকে মোয়াজ্জেমকে ডেকে এনে দিল্লিতে হাইকমিশনার হিসেবে কয়েক বছর আগে নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তার সর্বশেষ ছবি যেটি আমার চোখে এখন ভাসছে, মাত্র কয়েক দিন আগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে মোয়াজ্জেমের বিদায়ী সাক্ষাৎকার।’

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় এমএসসি ডিগ্রিধারী সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ১৯৬৮ সালে সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস এক্সামিনেশনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত অবস্থায় তিনি পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রত্যাহার করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে স্বাধীন বাংলাদেশের দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করেন।

সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে ভুটান, ইরান ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ওয়াশিংটন, ওয়ারসো, নয়াদিল্লি ও জেদ্দায় বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।

মোয়াজ্জেম আলী পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে ২০০১ সালের ১১ মার্চ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকবিষয়ক সংস্থা-ইউনেস্কো যে স্বীকৃতি দেয়, তা আদায়ের প্রক্রিয়ায় ওই সময় ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন মোয়াজ্জেম আলী।

জেপি/এইচএ/জেআইএম