আসুন সবাই মিলে উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলি : জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, আসুন আমরা সবাই মিলে একটা উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলি যেখানে কোনো দারিদ্র থাকবে না। তিনি বলেন, আমাদের সামনে সামান্যই সুযোগ অবশিষ্ট আছে। এ বিশ্বকে নিরাপদ, আরো সবুজ এবং আরো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে আমাদের অবশ্যই সফলকাম হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে ভাষণকালে এ আহ্বান জানান। অধিবেশনে একাদশ বক্তা হিসেবে ভাষণ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের সামষ্টিক অঙ্গীকার অনুযায়ী এমন একটি শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ উন্নত বিশ্ব গড়ে তুলি যেখানে দারিদ্র্য এবং অসমতা, সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ, জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘাত এবং বিদ্বেষ ও বৈষম্য থাকবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, সমাজে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতিষ্ঠিত না হলে আমরা টেকসই উন্নয়নও নিশ্চিত করতে পারব না। এজন্য আমরা শান্তি সমুন্নত রাখতে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে বদ্ধপরিকর।
তিনি আরো বলেন, আসুন, আমরা আমাদের নৈতিক সাহস এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সন্তান এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ও নিরাপদ জীবন ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত রেখে যাওয়ার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করি। নিরাপদ ভবিষ্যত রেখে যাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বি চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের সকল দেশকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমি নিজে সন্ত্রাস এবং সহিংস জঙ্গিবাদের শিকার। আমার পিতা বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তিন ভাই এবং অন্যান্য নিকট আত্মীয়দের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি নিজেও কমপক্ষে ১৯ বার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস জঙ্গিবাদ এবং মৌলবাদের প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, বাঙালি জাতির গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত রয়েছে, সেসব চরমপন্থী ও স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তির মোকাবেলায় আমরা সদা-তৎপর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি টেকসই, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমাদের যে আকাঙ্ক্ষা সেখানে কেউ যাতে পিছিয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা সীমিত সম্পদ দ্বারা বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম দারিদ্র্য হ্রাসকারী দেশ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্যের হার ১৯৯১ সালে যেখানে ৫৬.৭ শতাংশ ছিল, বর্তমানে তা ২২.৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এমডিজি-১, ২, ৩, ৪, ৫ এবং ৬ অর্জন করেছে অথবা অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক পথেই এগুচ্ছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত ৬ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৫-’৬ থেকে ২০১৪-’১৫ পর্যন্ত রফতানি আয় এবং প্রবাসীদের রেমিটেন্স প্রেরণের পরিমাণ ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় সাড়ে ৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে চলতি অর্থবছরে ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ইউএনডিপির নিম্ন মানবসম্পদ উন্নয়নের দেশ থেকে মধ্যম সারিতে উন্নীত হয়েছে এবং বিশ্ব ব্যাংকের মান অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি আমরা আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে স্থল এবং সমুদ্র সীমানা সমস্যা সংক্রান্ত সমস্যাগুলির শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে আমরা ভারতের সঙ্গে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় করেছি।
যার মাধ্যমে প্রায় ৫০ হাজার রাষ্ট্রবিহীন ছিটমহলবাসী তাদের পছন্দের রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পেরেছেন। তাদের দীর্ঘদিনের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে। এ কাজটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে আমরা সমগ্র বিশ্বের কাছে কূটনৈতিক সাফল্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছি।
বিএ