ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

আইনি চাপের মুখে মিয়ানমার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৩৫ পিএম, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯

রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে অবশেষে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে মিয়ানমার। দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়ের করা মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর)।

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশ গাম্বিয়ার করা মামলার বিচার শেষ হতে কয়েক বছর লাগতে পারে। তবে শুনানি শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে আইসিজে বেশকিছু অন্তর্বর্তী নির্দেশনা দিতে পারে বলে আভাস মিলছে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, আদালতের এসব নির্দেশনা মিয়ানমার পালন না করলে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।

১৯৫৬ সালে জাতিসংঘের গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে মিয়ানমার আইসিজের যে কোনো নির্দেশনা মানতে বাধ্য। ফলে এটা স্পষ্ট যে, রোহিঙ্গাদের নির্মম নির্যাতনের বিচার শেষ হওয়ার আগেই বড় ধরনের চাপে পড়তে যাচ্ছে মিয়ানমার।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার বা নির্দেশনা মানতে মিয়ানমার বাধ্য।

গত ১১ নভেম্বর ওআইসির সমর্থন নিয়ে আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলা করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মামলায় আদালতের কাছে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা এবং তাদের প্রাপ্য ন্যায় বিচার নিশ্চিতের জন্য কিছু অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন জানানো হয়।

সূত্র বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে আদালত কয়েক মাসের নির্দেশনা দিতে পারে মিয়ানমারকে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যাসহ সব ধরনের নিপীড়ন, তাদের বাড়িঘর ও সম্পদ ধ্বংস বন্ধ রাখার পাশাপাশি জীবন ও জীবিকার ওপর হুমকি বন্ধের নির্দেশনা। পাশাপাশি মিয়ানমারের সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গণহত্যা থেকে নিবৃত্ত রেখে এবং গণহত্যার আলামত নষ্ট না করার বিষয়েও আদালত ব্যবস্থা নিতে বলতে পারে মিয়ানমারকে।

এর আগে বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় গণহত্যার অভিযোগে যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলায় চূড়ান্ত বিচারের আগে আইসিজে থেকে এ ধরনের নির্দেশনা এসেছিল। আইসিজের তথ্য অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসের পিস প্যালেসে আইসিজে অবস্থিত। সেখানে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) শুনানির শুরুতে মামলাকারী দেশ গাম্বিয়া আদালতের সামনে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করবে। পরদিন আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য উপস্থাপন করবে মিয়ানমার। ১২ ডিসেম্বর প্রথমার্ধে গাম্বিয়া এবং শেষার্ধে মিয়ানমার নিজ নিজ পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করবে। আইসিজেতে নিজ দেশের পক্ষে বক্তব্য দেবেন অং সান সু চি। শুনানিতে অংশ নিতে ইতোমধ্যে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর নেদারল্যান্ডসের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এ মামলার শুনানির সময় আইসিজেতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবে। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধিদলও ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়েছে। প্রতিনিধিদলে নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধিও রয়েছেন।

জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদলও আইসিজের শুনানিতে অংশ নিতে নেদারল্যান্ডস যাচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিরা সেখানে যাবেন।

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আইসিজের শুনানিটা খুব প্রাথমিক পর্যায়ের। তবে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ যেহেতু খুব গুরুতর, সেহেতু আদালতের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে রাখাইনে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বা হয়েছে এবং সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করলে সেখানে অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে, তাহলে আদালত প্রভিশনাল কিছু নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করবে গাম্বিয়ার যুক্তি উপস্থাপন এবং মিয়ানমারের যুক্তি খণ্ডনের ওপর। সাময়িক নিষেধাজ্ঞা এলেও মিয়ানমার বিরাট একটি আন্তর্জাতিক চাপে পড়বে, এটা অবধারিত।

‘আদালতের এমন নির্দেশনা রোহিঙ্গা, গাম্বিয়া ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে’- বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এ অধ্যাপক।

গাম্বিয়ার মামলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক এসব মামলায় মিয়ানমার চাপে পড়ায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সামনে নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে বাংলাদেশকে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশকিছু চৌকিতে সন্ত্রাসীদের হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। জাতিসংঘ এ নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছে। প্রাণ বাঁচাতে সেসময় রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে শুরু হয় বাংলাদেশে।

কক্সবাজারে এখন নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৭ লাখ ২ হাজার। ২০১৬ সালের অক্টোবরের পরের কয়েক মাসে এসেছিল ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা। অন্যরা আগে থেকেই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

জেপি/এইচএ/এমএআর/পিআর