ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি ব্যবসায়ীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:০৫ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

> চাল, ডাল, লবণ, তেল, চিনিসহ খাদ্যপণ্যের কোনো ঘাটতি নেই
> ১০ দিনের মধ্যে কমবে পেঁয়াজের দাম
> পেঁয়াজের আমদানি, বিক্রির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে
> মোটা চাল না খাওয়ায় বেড়েছে সরু চালের দাম
> অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত
> মজুত করলেই শাস্তি

ভোক্তারা যাতে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য পায় সে জন্য চাল, ডাল, লবণ, তেল, চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

রোববার ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) ভবনে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাণিজ্য, শিল্প, খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি ও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

এফবিসিসিআই সভাপতি ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম, শিল্প ও কৃষি সচিব, সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধান এবং ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে আমাদের ২৩ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ নষ্ট হয়। আনুমানিক হিসাবে দেখা যায় ৭-৮ লাখ টন ঘাটতি পড়ে। মাসে গড়ে আমাদের পেঁয়াজের ভোগের পরিমাণ দুই লাখ টন। রোজায় এটি একটু বেশি হয়। গড়ে আমাদের মাসে প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টন আমদানি করতে হয়। এই আমদানিটা বেড়ে যায় বছরের শেষ দিকে এসে। এ সময় এসেই ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে।

আমাদের আমদানি করা পেঁয়াজের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই আসে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে। কিন্তু ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পেঁয়াজের সংকট মোকাবিলায় বড় বড় ব্যবসায়ীকে পেঁয়াজ আমদানি করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। তারা আমাদের কথামতো মিসর-তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজ আসতে এক মাস সময় লাগবে প্রথম অবস্থায় আমরা তা বুঝতে পারিনি। ১০ দিনের মধ্যে জাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজ চলে আসবে। সেই পেঁয়াজ খোলাবাজারে বিক্রি করা হবে। খুচরা পর্যায়ে এই পেঁয়াজের দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পড়বে- যোগ করেন টিপু মুনশি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যেদিন ভারত রফতানি বন্ধ করল সেই দিনই পেঁয়াজের দাম বাড়ল। দাম বাড়িয়ে তারা ঠিক কাজ করেনি। আমাদের ভোক্তা অধিকার এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয় আড়াই হাজার মানুষকে জরিমনা করেছে। আমরা বেশ কয়েকজনকে জেলও দিয়েছি। আমাদের সব মিলিয়ে চিন্তা করতে হয়েছে। আমরা যত বেশি চাপ দেব বাজারে তার একটা উল্টা রিঅ্যাকশন পড়তে পারে, সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হয়েছে।

চালের দামের বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চালের দাম যেটুকু বেড়েছে খুচরা পর্যায়ে। সরু চালের দাম বেড়েছে। মোটা চালের দাম বাড়েনি। যারা মোটা চাল খেত, তারাও সরু চাল খাওয়া শুরু করেছে, কম দাম হওয়ার কারণে। এখন মোটামুটি আমরা মোটা চাল খাই না। সরু চালের দাম যেটুকু বেড়েছিল, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছি।

‘আমরা কন্ট্রোল রুম খুলেছি, ভোক্তা অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। আমাদের ১০টি টিম বাজার মনিটরিং করছে। আশা করছি চালের মূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে আছে এবং প্রচুর মজুত আছে। খাদ্যের কোনো অসুবিধা হবে না এটা আমি নিশ্চিত করতে পারি’ বলেন খাদ্যমন্ত্রী।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীদের সরকারের পক্ষ থেকে সোজা একটা মেসেজ দেয়া হয়েছে- যদি কেউ মজুত করে, অহেতুক মূল্যবৃদ্ধি করে, এগুলো চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বাজারে এখন কোনো খাদ্যের ঘাটতি নেই। পেঁয়াজসহ এ ধরনের সব পণ্য আছে সেগুলো কি আমদানি হয়েছে? কোথায় আমদানিকারকরা এগুলো বিক্রি করেছে? কে কবে বিক্রি করেছে? এগুলোর তথ্য আমরা সংগ্রহ করছি। বিশেষ করে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা সব জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। আমরা যদি দেখি তারা কোনোভাবে যোগসাজশ করে দাম বাড়িয়েছে, তাহলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের যে আইন আছে সেই আইনে ব্যবস্থা নেব।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ভোক্তারা যাতে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য পান সে বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে আজকের বৈঠক। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম যাতে অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে এবং ভোক্তারা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর বছরব্যাপী চাহিদা, বাংলাদেশে পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত ব্যবস্থা, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো সমস্যা সৃষ্টি হলে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে তা মোকাবিলা করা হবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এমএএস/এসআই/বিএ/এমএস