ককপিটে নিয়ে কেবিন ক্রুদের কুপ্রস্তাব দেন পাইলট ইশরাত
সুন্দরী, শিক্ষিত ও স্মার্ট মেয়েরাই সাধারণত কেবিন ক্রু পেশায় চাকরি করেন। বিমানে ইন-ফ্লাইটে তাদের আতিথেয়তায় এয়ারলাইন্সের ভাবমূর্তি বাড়ে। যাদের ভূমিকায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সম্মান বাড়ে সেই কেবিন ক্রুদের ফ্লাইটে কোনো নিরাপত্তা নেই। সম্প্রতি ককপিটে পাইলটদের যৌন হয়রানির শিকার হন নারী কেবিন ক্রুরা।
এমনই একটি ঘটনা ঘটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি হুমকির মুখে পড়েছে। ঘটনার নায়ক ক্যাপ্টেন ইশরাত আহমেদ। তার বিরুদ্ধে দুই কেবিন ক্রু এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও বরাবর যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন।
বিমান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সার্ভিস শাখা সূত্র জানায়, গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম হয়ে আবুধাবিগামী বিজি-১২৭ ফ্লাইটের ককপিটে ছিলেন ক্যাপ্টেন ইশরাত। ফ্লাইটে চিফ পার্সার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন খুকু। ওই ফ্লাইটে দুই কেবিন ক্রু ছিলেন। ক্যাপ্টেন ইশরাত ককপিটে নিয়ে তাদের কুপ্রস্তাব দেন।
অভিযোগে এক কেবিন ক্রু বলেছেন, ফ্লাইটের চিফ পার্সার খুকু তাকে পেছনে পজিশন দেন। কিন্তু ক্যাপ্টেন ইশরাতের নির্দেশে তাকে আবার সামনের পজিশনে আনা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সামনে পজিশন পাওয়া কেবিন ক্রু ককপিটে সার্ভিস দেন। ওই ক্রু ককপিটে সার্ভিস দিতে গিয়ে দেখেন, ক্যাপ্টেন ইশরাত সিটে বসে মদ খাচ্ছেন। এ সময় সিট বেল্ট খুলে ওই ক্রুকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন তিনি। ওই ক্রু তাৎক্ষণিক ককপিট থেকে বেরিয়ে বিষয়টি চিফ পার্সারকে জানান। চিফ পার্সার পুনরায় ওই ক্রুকে পেছনে পাঠাতে চাইলেও ক্যাপ্টেন ইশরাত বাধা দেন। পরবর্তীতে আবারও ওই ক্রু ককপিটে সার্ভিস দিতে গেলে ক্যাপ্টেন ইশরাত অ্যাপ্রোন খুলে সার্ভিস দিতে বলেন। এ সময় ইশরাত মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে জানান ওই ক্রু। চট্টগ্রামে ফ্লাইট বিরতিকালে হোটেলে ওই ক্রুদের পাশাপাশি রুম নেয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন।
অভিযোগকারী আরেক ক্রু জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের যা বলার তদন্ত সেলের কাছে বলেছি। গতকাল রোববার আমরা বেশ কয়েকজন কেবিন ক্রু তদন্ত টিমের কাছে বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে নারী পরিষদের প্রতিনিধিও ছিলেন। এর বাইরে গণমাধ্যমকে আর কিছু বলব না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্লাইট সার্ভিসে কর্মরত এক নারী কর্মকর্তা জানান, বিমানের ফ্লাইট সার্ভিসে কর্মরত বেশিরভাগ কেবিন ক্রু ক্যাপ্টেন ইশরাতের সন্তানের বয়সী। তারপরও তিনি সন্তানতুল্য মেয়েদের কুপ্রস্তাব দেন এবং বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করেন।
এ বিষয়ে একাধিকবার ক্যাপ্টেন ইশরাতের মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলে তারও কোনো উত্তর দেননি তিনি।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সার্ভিস শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক আফরোজা খানম নিপু জাগো নিউজকে বলেন, আমার কাছে ই-মেইলে অভিযোগ করেছে নির্যাতনের শিকার কেবিন ক্রুরা। বিষয়টি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশে তদন্তাধীন। এর বেশি জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিমানে দেড় শতাধিক পাইলট কর্মরত। ক্যাপ্টেন ইশরাত একমাত্র পাইলট, যিনি অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ২০১২ সালে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সদস্যপদ হারান। ইতোমধ্যে তার নামে দুই কেবিন ক্রু অভিযোগ দেয়ার পর আরও ২০ জন স্বপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করেন। কেউ কেউ বলছেন, বিভিন্ন সময় ককপিটে নিয়ে মোবাইলে অশ্লীল ছবি দেখাতেন ক্যাপ্টেন ইশরাত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী কেবিন ক্রু জানান, ক্যাপ্টেন ইশরাত এবং ক্যাপ্টেন অরবিন্দ প্রায়শই কেবিন ক্রুদের মনোরঞ্জন চাইতেন। এটাই তাদের মূল কাজ বলে জানান তিনি।
আরএম/জেএইচ/জেআইএম