ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সৌরশক্তি দিয়ে ৫৩ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:৪৭ পিএম, ০৬ নভেম্বর ২০১৯

ভবিষ্যতে চাহিদা মেটাতে কয়লা ছাড়াই পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ ও টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদন বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব। প্রস্তাবিত কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের মাত্র ১০ শতাংশ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলো অধিকাংশ এখনও ঘোষণা কিংবা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মাণের প্রস্তুতি রয়েছে।

যেখানে সৌরশক্তি ব্যবহার করেই ৫৩ গিগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বাংলাদেশের। প্রস্তাবিত ও চলমান কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প সমূহের পরিবর্তে স্বল্প খরচে সৌরশক্তি বা বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশ চাইলেই তার প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত ‘কয়লার শ্বাসরুদ্ধ : কার্বন বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতিবেদন প্রকাশের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ (ডব্লিওকেবি)।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল মতিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ওয়াটারকিপার্সের বাংলাদেশের কো-অডিনেটর শরীফ জামিল, সংগঠন ব্রতির নির্বাহী পরিচালক শারমিন মোর্শেদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদুৎ উৎপাদন ৬৩ গুণ বাড়ানোর পরিকল্পনায় বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে চীন, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ভারতের মতো বেশ কয়কটি প্রভাবশালী রাষ্ট্র। কয়লার শ্বাসরুদ্ধ কার্বন বিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রমবর্ধমান বিদেশি অর্থায়নে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা একটি থেকে বাড়িয়ে ৩০টিতে উন্নতি করা হবে, বিদ্যমান ৫২৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে কয়লাবিদ্যুৎ উৎপাদন ৩৩ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট উন্নিত করবে। যা বায়ুমণ্ডলে বার্ষিক ১১ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড নিঃসরণ করবে। আর এটি সত্যিকারভাবে একটি কার্বন বিস্ফোরণের ঘটনা যা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠী অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে।

coal-1

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণ বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণেই বাংলাদেশে স্থলভাগের ১১ শতাংশ হারাবে এবং চার ও পাঁচ মাত্রায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানায় ঝুঁকি ১৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেবে। যা উপকূলীয় বসবাসরত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলবে। তারপরও পরিকল্পনা অনুযায়ী অতিরিক্ত ২৯টি কয়লা নির্ভর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন উপরোল্লিখিত বিপর্যয়কে বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ।

বক্তারা বলেন, বড় আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণের পরিকল্পনা মূলত বৈদেশিক ঋণ সহায়তা নির্ভর, যেটি সার্বিকভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বাড়িয়ে দেবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য ভারসাম্য আরও প্রকট করে তুলবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশকে বার্ষিক ২০০ কোটি ডলার মূল্যের ৬ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করতে হবে। যা বাংলাদেশে কয়েক দশকের জন্য উচ্চমূল্যের কয়লা আমদানির ফাঁদে ফেল। যেটি কিনা নতুন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শঙ্কাও তৈরি করবে।

তারা আরও বলেন, বিশ্বের কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ সবচেয়ে ক্ষতিকর ও নোংরা জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত। যা বিষাক্ত নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার অক্সাইড, পিএম ২.৫, কয়লার ছাই ও এসিড নির্মাণের মাধ্যমে বায়ু ও পানি দূষণে বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া পারদ, শিসা ও ক্রোমিয়ামের মত ভারি ধাতু নির্গমন করে, দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে শুরু করে অকাল মৃত্যুরও কারন। এই বিবেচনায় এটি পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর একটি পরিকল্পনাও।

বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যখন বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে, সেখানে বাংলাদেশে কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন মূলত আত্মহননের নামান্তর। ইউনিসেফ ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সংঘটিত বন্যা ও সাইক্লোনসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশে এক কোটি ৯০ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎ হুমকির সম্মুখীন বলে সতর্কতা দিয়েছে। আর এক্ষেত্রে প্রস্তাবিত কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ বাংলাদেশকে গভীর সংকটে ফেলে দেবে।বর্তমানে বাংলাদেশে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র সমূহের মোট উৎপাদনের সক্ষমতা ১৯ হাজার মেগাওয়াট, যার মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ কয়লানির্ভর। সেই হিসেবে দেশের বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসা ৯০ ভাগ মানুষ উপকৃত হচ্ছে কোন ধরনের কয়লা আমদানি নির্ভরতা ছাড়াই।

এএস/জেএইচ/এমকেএইচ