আলো আধাঁরিতে ব্যতিক্রমী মাংস হাট
আজিমপুর কবরস্থানের ফটকের সামনে নিয়নবাতির নীচে দাঁড়িয়ে দর-কষাকষি চলছিল ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে। প্লাস্টিকের ব্যাগটি হাতে উঁচিয়ে বিক্রেতাকে উদ্দেশ্য করে ক্রেতা বললেন, কেজি চারেক অইতে পারে, মাংস কম, হাড্ডিই বেশি, ১২শ টাকা দেই, দিলে দেও।
মেজাজ দেখিয়ে বিক্রেতা বলে উঠলো পাঁচ কেজির কম ওজন না, একদাম ২৫শ’ টাকা, একটা পাই-পয়সা কম কইলেও অইতনা। বেশ কিছুক্ষণ দামাদামির পর ১৮শ’ টাকায় দফারফা হলো।
নগরীর বিত্তবানরা ১০ হাট ঘুরে আর্থিক ক্ষমতানুসারে পছন্দসই পশু কিনে কোরবানি দিলেও একই নগরীর হাজার হাজার বাসিন্দা কোরবানি দিয়ে মাংস খাওয়ার সুযোগ পান না। তাদের জন্য নগরীর আজিমপুর, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল, ফকিরেরপুলসহ বিভিন্ন স্থানে ঈদের দিন সন্ধ্যার পর অন্যরকম এক মাংসের হাট বসে।
বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসা বাড়িতে ঘুরে ঘুরে হৃতদরিদ্ররা দু’চার টুকরো করে মাংস সংগ্রহ করেন। সন্ধ্যার পর এ ধরনের হাটে এসে সেই মাংস দর-দাম করে বিক্রি করেন।
শুক্রবার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক আজিমপুর, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল, ফকিরেরপুলের ব্যতিক্রমী এ বাজার ঘুরে বিপুল সংখ্যক নিম্ন শ্রেণির দরিদ্র মানুষকে মাংস কেনাবেচা করতে দেখেছেন। মাংসের টুকরা ও প্রকারভেদ অনুযায়ী সর্বনিম্ন ২শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৫শ’ টাকা কেজি দরে কেনাবেচা চলে।
বিক্রেতারা জানান, সারাদিনে যে পরিমান মাংস সংগ্রহ করেছেন তা বিক্রি করে চাল, ডাল ও মসল্লা নিয়ে ঘরে ফিরবেন। তারা পরিবারের সকলেই দিনভর মাংস সংগ্রহ করেছেন। এক দুইজনের ভাগেরটা রেখে বাকিটুকু বিক্রি করে দিয়ে চাল, ডালসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনবেন।
ক্রেতারা জানিয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ। চাকরি বা ব্যবসা করে যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে একা তো দূরের কথা শরিকেও কোরবানি দিতে পারেন না। তাই ঈদের দিন সন্ধ্যায় এ বাজারে এসে কয়েকজন মিলে অপেক্ষাকৃত কম দামে মাংস কিনে রান্না করে খান।
ইস্টার্ন প্লাজা সংলগ্ন নাহার প্লাজার সামনের পান দোকানদার আলী হোসেন। এক পোটলা মাংস নিয়ে হাতিরপুল বাজারের অদূরে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। এ প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে জানান, স্ত্রী ছেলে মেয়ে জামালপুরে থাকেন। তাই রান্না করে খাওয়ার সুযোগ নেই। সারাদিনে যা পেয়েছেন তা দেশে পাঠাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাংস পচে যেতে পারে বলে বিক্রি করতে এসেছেন। হাজার দেড়েক টাকা বিক্রি করতে পারলে গ্রামের বাড়িতে এক হাজার টাকা পাঠাবেন বলে জানান।
এলিফ্যান্ট রোড সংলগ্ন অনন্ত গার্মেন্টসের কর্মী রুবেল ও তার বাবা মাংস কেনার জন্য দর-দাম করছিলেন। তারা জানালেন, গ্রামের বাড়িতে তারা শরিকে কোরবানি দেন। কিন্তু শহরে এক শরিকে কোরবানি দিতে গেলে যে পরিমান টাকা দরকার তা তাদের নেই। তাই মাংস কিনছেন।
আজিমপুর চায়না বিল্ডিং-এর অদূরে রাস্তার বাতির নীচে দাঁড়িয়ে এক মহিলা দুই কেজি মাংস ৭শ’ টাকা পর্যন্ত দাম বললেও বিক্রেতা ৮০০ টাকা একদাম বলে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় নীলুফারের সাথে কথা বলতে চাইলে সে জানালো, তার স্বামী একটি সরকারি অফিসে চাকরি করেন। দুই ছেলেমেয়ের একজন কলেজে অপরজন স্থানীয় একটি স্কুলে পড়ে। স্বামীর আয়ে কোরবানি দিতে পারেন না। তাই মাংস কিনতে এসেছেন। তিনি এ প্রতিবেদককে ছবি না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মান সম্মান তো সবারই আছে। দয়া করে ছবিটি পত্রিকায় দিবেন না।
এমইউ/একে
সর্বশেষ - জাতীয়
- ১ নিউ এইজ সম্পাদককে হয়রানি, ঘটনা তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
- ২ লেখাপড়ায় মনোযোগ দেন, প্রয়োজনে আবারও রাস্তায় নামবো
- ৩ ৩৭ বছর পর চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে প্রকাশ্যে শিবির
- ৪ ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি এ সপ্তাহে, ক্যাডার-ননক্যাডারে পদ ৩৭০১
- ৫ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ, ওষুধে ব্যয় ২০ শতাংশ