আমাদের নিরাপত্তায় মাঠে ঈদ করছেন তারা
পশু কোরবানির মাধ্যমে ঈদুল আজহার উৎসবের আমেজে মেতেছে সারা বাংলাদেশ। উৎসবের এই দিন প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে কাটাতে চান সবাই। কিন্তু দেশের মানুষের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাড়ি ফেরা হয় না অনেকেরই। প্রিয়জনকে ফেলে দেশের জন্য দায়িত্বপালনকারীদের যদি কোনো তালিকা তৈরি করা হতো, তালিকার সবার উপরে নাম লেখা হতো বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর।
সাধারণ মানুষের ঈদ আনন্দকে নিবিঘ্ন করতে সারাদেশে এবার মোট ১ লাখ ৩২ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন। নাড়ির টানে বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে গ্রামে চলে গেছেন অনেকে। তাদের মালামাল নিরাপদে রাখতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন তারা। আর দায়িত্ব পালন শেষে ব্যারাক বা অস্থায়ী আবাসেই বাকি সময় কাটবে তাদের।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহছান জাগো নিউজকে জানান, জেলা এবং মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালন করছেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের আরো ২ হাজার কর্মকর্তা।
দেশের লঞ্চ টার্মিনাল, বাস আর রেল স্টেশন থেকে শুরু করে ঢাকায় রেখে যাওয়া জনগণের আমানতগুলোর দেখভাল করছেন পুলিশ বন্ধুরা। পাশাপাশি ঈদের জামায়াত সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান, গরু কোরবানি, ট্রাফিকিং ব্যবস্থা সচল রাখতে মাঠেই ঈদ করছেন তারা।
এমন দিনে দায়িত্ব পালনের অনুভূতি জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ট্রাফিক জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. আবু ইউছুফ বলেন, ‘বাড়িতে কোরবানি দেয়া সত্বেও পুলিশের সিংহভাগ সদস্য প্রিয়জনকে ছেড়ে ঈদের এই দিনটিতে দায়িত্ব পালন করছে। সাধারণ মানুষকে নিরাপদে ঈদ করাতে আমরা সবসময় দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত রয়েছি।’
সড়ক নৌপথের পাশাপাশি দেশের বিমানবন্দরগুলোরও নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন তারা। ঈদুল আজহায় এয়ারপোর্ট এপিবিএনের সাড়ে ৮শ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।
ঈদের এই ছুটির দিনে অন্যান্যদের মধ্যে বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করবেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আলমগীর হোসেন শিমুল। অনুভুতি জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘যাত্রীসেবায় আস্থা অর্জন করতে পারায় এয়ারপোর্টে এপিবিএন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। জনপ্রিয়তার এই উচ্ছ্বাস দেখে আমরা বাড়ি যাওয়া ভুলতে পারি। এয়ারপোর্ট এপিবিএনের সদস্যরা যাত্রী সাধারণের বাড়ি গমনাগমন দেখে ঈদের আনন্দ খুঁজবে। আর এই হচ্ছে সত্যিকার পুলিসিং এর আনন্দানুভূতি।’
ঈদে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স (সোয়াট) টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন কুন্ডু। জনস্বার্থে এধরণের ছুটির দিনে দায়িত্ব পালনের অনুভূতি জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। জনগণকে সেবা দিতে আমাদের এক বিন্দুও কৃপণতা নেই। ঝড়বৃষ্টিসহ যেকোনো দুর্ভোগে আমরা যেমন সবার পাশে থাকি, তেমনি অনাবিল আনন্দের দিনটিও যাতে সবাই নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারে তার সুচারু নিরাপত্তা দেই। ঈদ-পূঁজাসহ যেকোনো উৎসবে আমরাই আপামর জনসাধারণের প্রকৃত সেবক হই। এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মানুষের পাশে থাকতে পেরে আমি গর্বিত, আনন্দিত। এভাবে নিরাপত্তা দিয়েই দেশের মানুষকে সবসময় আগলে রাখতে চাই।’
এমন দিনে জনগণের সেবা করতে পেরে ‘খুব ভালো লাগছে’ বলে এক বাক্যে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন ডিবির আরেক কর্মকর্তা ফাহিয়াত উদ্দিন রক্তিম।
নাজনীন বেগম নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায়ই আমরা তাদের ছোট করে কথা বলি। বেশিরভাগ সময়ে তাদের সম্পর্কে আমরা নেতিবাচক মন্তব্য করি। এসব জানা সত্ত্বেও পুলিশ ভাইয়েরা নিজের পরিবার ফেলে আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে। আমরা সত্যি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’
বিশেষ এই দিনটিতে পুলিশের অনেক সদস্যই নিজেদের প্রতি জনগণের ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ পরিবর্তনের অনুরোধ করেছেন।
এআর/এসকেডি/এমএস