ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

গ্রামে শহরের সুবিধা দিতে ‘পল্লী জনপদ’ নির্মাণ করবে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:০৩ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৯

গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে অবকাঠামো ঠিক রেখে শহরের সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবনবিশিষ্ট ‘পল্লী জনপদ’ নির্মাণ প্রকল্পের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছে সংস্থা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে রয়েছে।

বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত ১৯তম অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, পরিকল্পিত গ্রামীণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকায় গ্রামীণ জনগােষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুযােগ সুবিধা সম্বলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন বিশিষ্ট ‘পল্লী জনপদ’ নির্মাণের কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমােদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

প্রকল্পের বিস্তারিত জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রামের সবাইকে গ্রামের এক পাশে নিয়ে আসবো। আমাদের খরচে বাড়ি ঘর করে দেব। তারা খুবই কম স্বল্প সুদে কিস্তিতে সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করে দিবে। এতে করে পুরো গ্রামের কৃষি জমি কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করতে পারবে। আর গ্রামবাসীকে এক সাথে নিয়ে আসলে তারা এখন যে বিক্ষিপ্তভাবে রয়েছে তা এক স্থানে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া আমরা গ্রামে যে অবোকাঠামো তৈরি করি তা আর করা লাগবে না। আমরা আমাদের সার্ভিস ডেলিভারি অনেক কম খরচে করতে পারবো। এটি অত্যন্ত সুন্দর একটি প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ও বিশ্বাসের একটি প্রকল্প। দেরিতে হলেও শুরু করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, ৭টি স্থানে করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি স্থানে কাজ শুরু করেছি। আর বাকিগুলোর কাজ এগুলো হয়ে যাওযার পর ফলাফল দেখে করবো। এতে করে কেউ ঠকবে না। গ্রামের প্রতিটা মানুষ উপকৃত হবে এবং তারা শহরে সেসব সুযোগ-সুবিধা থাকে যেমন বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং সুবিধা থেকে শুরু করে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা, বড়দের গল্প করার ব্যবস্থা এবং গরু-ছাগল পালনেরও ব্যবস্থা থাকবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো ঠিক রেখে শহরের সব সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় হলো এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রকল্পের তিনটি ইউনিটের মধ্যে রংপুরে ৮০ শতাংশ, গোপালগঞ্জে ৮০ শতাংশ এবং বগুড়া ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গ্রামে ৪-৫ তলা ভবন হবে। এতে তিন থেকে চার রকমের রুম হবে। এটা একটি নতুন উদ্যোগ, ভালো প্রকল্প। এতে আমাদের অনেক কৃষিজমি বেঁচে যাবে। সবাই যে যার যতটুকু জমি আছে ততটুকু জমি তার থাকবে। যে যেভাবে মালিক আছেন সেভাবেই থাকবে। এতে সরকার সারা বছর যে সার্ভিস দেয় তার খরচ অনেক কমে আসবে।

এ প্রকল্পের খরচ কে দিবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার নির্মাণ করে দেবে। তবে স্বল্প সুদে কিস্তি ভিত্তিতে গ্রামবাসী তা পরিশোধ করে দিবে। এটা পাইলট প্রকল্প হিসেবে করা হচ্ছে। এটা করা হলে পুরা গ্রামের জমি ব্যবহার করা যাবে। এটা পরিচালনার দায়িত্ব এলজিআরডি মন্ত্রণালয় পরে ঠিক করে দেবে। তবে এটা বাস্তবায়ন করছে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।

গ্রামের মানুষ আসবে কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা ভালো উদ্যোগ। তারা এখানে আসবে বলেই আমরা এটা করছি। এতে তাদের ক্ষতি কোথায়। কোনো ক্ষতি তো নেই, বরং সরকারকে সাহায্য করা হলো।

গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ব্যক্তিরা এ প্রকল্পের আওতায় আসবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা আসবে কি-না এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে আমার মনে হয় গ্রামের স্বার্থে তারাও আসবে। একটা ভালো উদ্যোগ তারা আসবে না কেন। বিদেশে আছে আমরাও চালু করতে যাচ্ছি। সেখানে পারলে আমরা কেন পারব না?

প্রকল্পের প্রস্তাবনা থেকে জানা যায়, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন বিশিষ্ট ‘পল্লী জনপদ’ নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৪ সালের আগস্টের ১৯ তারিখ একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ৭টি সাইটের মধ্যে চলমান ৩টি সাইটের (রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা) নির্মাণ কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণে বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের জুনের ১৯ তারিখের সিসিইএ’র সভায় ভূতাপেক্ষ অনুমোদন প্রস্তাব সম্পর্কিত বিষয়ে কার্যবিবরণীর সিদ্ধান্ত সম্বলিত সারসংক্ষেপ বিবেচনাকালে প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন প্রদান করেন। পল্লী জনপদের কয়টি কাজ শেষ হয়েছে এবং এর সফলতা কতটুকু তা বিশ্লেষণ করতে হবে। যে কাজ শেষ হয়ে গেছে সেগুলো সম্পন্ন করার পর বাকিগুলো করা সমীচীন কি-না তা যাচাই করে দেখে নতুন কাজ শুরু করতে হবে।

আরও জানা গেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড, গাজীপুরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত চলমান তিনটি সাইটে মোট ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নের জন্য পিপিএ-২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) অনুযায়ী এবং পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) অনুযায়ী জনস্বার্থে এবং জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণে সিসিইএর ভূতাপেক্ষ অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

এমইউএইচ/এমএসএইচ/পিআর