নার্সিং সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
নার্সিং খাতে বিরাজমান সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য সচিব (স্বাস্থ্য শিক্ষা) শেখ ইউসুফ হারুন নার্সিং সেক্টরের বিরাজমান সমস্যা অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে এ কথা জানান তিনি।
সাক্ষাৎকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিব প্রধানমন্ত্রীকে জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রুল অব বিজনেস অনুসরণ না করে এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ভঙ্গ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি বোর্ড পেশেন্টকে টেকনোলজিস্ট ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্স পরিচালনা করছে।
তারা জানান, নার্সিংয়ের বিভিন্ন কোর্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে নার্সদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। এর বিভিন্ন কোর্স, কারিকুলাম ও নীতিমালা ভিন্ন। ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য কারিগরি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত নার্সিং কোর্সের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষার জন্য কোনো রোগী ও হাসপাতাল নেই। তদুপরি এখন কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে রেজিস্ট্রেশন চাইছে। এ নিয়ে আদালতে স্বাস্থ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি মামলা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোযোগ দিয়ে সমস্যার কথা শোনেন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পাস করা শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য উভয়ের জন্য সম্মানজনক সমাধান খুঁজে বের করতে বলেন। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাথে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বসে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বের করার নির্দেশনা দেন তিনি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব (স্বাস্থ্য শিক্ষা) শেখ ইউসুফ হারুনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী শিগগিরই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে এর গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করবেন।
গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে আন্দোলনরত নার্সরা
জানা গেছে, নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি বিভিন্ন কোর্স স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক্তিয়ারভুক্ত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কারিগরি বোর্ডের মাধ্যমে ৯৪ টি নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কয়েক বছর যাবত শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। ইতোমধ্যেই সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে চার হাজারেরও বেশি নার্স পাস করে বের হয়েছে। আরও প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে কিংবা ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যেই কারিগরি বোর্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে যে সকল শিক্ষার্থী নার্সিং কোর্স পাস করে বের হয়েছে তাদেরকে একেবারে অস্বীকার করা যাবে না। তারা সরকারি বিয়ার একটি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পড়াশোনা করে পাস করেছে এবং সার্টিফিকেট লাভ করেছে। এখন তাদেরকে কীভাবে স্বীকৃতি দেয়া যায়, কীভাবে তাদেরকে কাজে লাগানো যায় সে উপায় বের করতে হবে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইন্টার্ন নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন, লাইসেন্স পরীক্ষা বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ ও বাংলাদেশ ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কারিগরি বোর্ডের পেশেন্টকে টেকনোলজিস্টদের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে নিবন্ধনের দাবির বিরোধিতা করে আন্দোলনে নামে।
গতকাল তারা রাজধানীর বিজয়নগরে বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল কার্যালয় অবরোধ করে এবং এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সচিবকে অবরুদ্ধ করেন। পরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের ডেকে নিয়ে এ সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলে নার্সরা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করেন।
নার্স নেতারা জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রুলস অব বিজনেস অ্যান্ড অনুসরণ না করে এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন ভঙ্গ করে ভিন্ন কোর্স, ভিন্ন নাম, ভিন্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা, ভিন্ন কারিকুলাম, ভিন্ন বিভাগ, অভিন্ন নীতিমালা শর্ত, কারিগরি বোর্ডের পেশেন্ট কেয়ার টেকনোলজিস্টদের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে নিবন্ধনের দাবির মাধ্যমে সৃষ্ট জটিলতার কারণে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থী কম্প্রিহেনসিভ বা লাইসেন্স পরীক্ষা গত এক বছর ধরে দিতে পারছেন না। এতে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। কারিগরি বোর্ডের টেকনোলজিস্টদের নার্সিং পেশায় নিয়োজিত করা হলে স্বাস্থ্য সেক্টরে ধস নামবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এমইউ/এমএসএইচ/পিআর