ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বৃষ্টির বেরসিক আচরণে ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ

প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সকাল থেকে রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো বৃষ্টি আবার কখনো রোদ। বৃষ্টির এই লুকোচুরি খেলায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। বৃষ্টির এই বেরসিক অাচরণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে বাড়ি ফেরা হাজারো মানুষদের।

ভিজে যবথবু আসমা আক্তার। এক হাতে ধরে রেখেছেন দেড় বছরের ছেলে আবিরকে। অন্য হাতে লাগেজ টেনে কাউন্টারের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাউন্টারের ভেতরে তিল পরিমাণও ঠাঁই নেই। তবে অন্যদের সহযোগিতায় ঠাসাঠাসি অবস্থায় একটুখানি জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি।
 
এবারের ঈদে শুধু রাজশাহীর আসমা আক্তার নন। বৃষ্টি কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো হাজারো যাত্রী। তবে বৃষ্টি বিড়ম্বনাকে উপেক্ষা করে পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দে মিলিত হতে রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে ভিড় করেছে ঘরমুখো মানুষ।
 
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে গাবতলীর কাউন্টারগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
 
কাউন্টারের ভেতরে নির্ধারিত যানবাহনের জন্য অনিশ্চিত অপেক্ষায় রয়েছেন অসংখ্য যাত্রী। তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা শোচনীয়। ভ্যাপসা গরমে বাতাসও যেন গলদঘর্ম। নিশ্বাস নেয়া দায়। যেখানে মানুষেরই ঠাঁই মিলছে না সেখানে লাগেজের উপর লাগেজ। ব্যাগের উপর ব্যাগ। কেউবা দেয়াল ঘেঁষে ঠেস দিয়ে বসেছেন। কেউ কেউ বাদাম খাচ্ছেন। সমবয়সীরা কিংবা এক সঙ্গের যাত্রীরা খোশগল্পে মত্ত রয়েছেন।
 
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টায় গাবতলী শ্যামলী বাস কাউন্টারে দেখা যায়, তিন বছরের ছেলে রাইসুলকে নিয়ে এক রকম বিপাকে পড়েছেন তার বাবা-মা। একে তো দুপুর ২টার বাসের জন্য অপেক্ষা, তারউপর বসার কোনো জায়গাও পান নি তারা। গরমে প্রচণ্ড কান্নাকাটি করছে রাইসুল।
 
বাবা আকমল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নওগাঁ যাবো। টিকিট আগে থেকেই কাটা আছে। যানজটের কথা চিন্তা করে দুই ঘণ্টা আগেই কাউন্টারে এসেছি। কিন্তু এখানে বসার ভালো জায়গা পাইনি। ভ্যাপসা গরমে বাচ্চার অবস্থা কাহিল। তাই কান্না করছে।’
 
গাবতলীর কাউন্টারগুলোতে দেখা গেছে, যে পরিমাণ যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যাত্রীর আগমণে সব কাউন্টারের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তাদের।

তবে হানিফ, শ্যামলী, এসআর, দেশ ট্রাভেলসসহ বেশ কয়েকটি কাউন্টারের সামনে যাত্রী সেবায় টাঙানো হয়েছে সামিয়ানা। অতিরিক্ত চেয়ারও দেয়া হয়েছে। দূর থেকে যারা বাস কাউন্টারে এসে অপেক্ষা করছেন তাদের জন্যই মূলত সেবামূলক এমন পদক্ষেপ নিয়েছে পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ।
 
তবে এমন পদক্ষেপের পরেও কাউন্টারের যাত্রী ছাউনি কিংবা সামিয়ানার নিচে ঠাই মিলছে না অধিকাংশ যাত্রীর। তাই অনেক যাত্রীই বৃষ্টির কারণে পড়েছেন বিড়ম্বনায়।
 
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার কর্মকর্তা আশরাফ আলী বলছেন, বৃষ্টি বিঘ্নিত আবহাওয়ায় যাত্রীদের বিড়ম্বনার কথা চিন্তা করেই কাউন্টারের সামনে অতিরিক্ত চেয়ার দেয়া হয়েছে। সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে। ঈদে যাত্রীদের চাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই সবার বসার স্থান সংকুলান হয় না। তাছাড়া বৃষ্টির কারণে একটু ভোগান্তি তো হচ্ছেই।
 
হানিফ এন্টারপ্রাইজের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. মোশাররফ হুসাইন বলেন, আমরা বিড়ম্বনা থেকে যাত্রীদের রক্ষা করতে আরো চেয়ারের ব্যবস্থা করছি। লম্বা করে অতিরিক্ত সামিয়ানা টাঙানোর ব্যবস্থা চলছে।
 
এসআর বাস কাউন্টারের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, বেশি রুটে আমাদের বাস চলে না। ৩/৪টি রুটে বাস চলে। বাস সংখ্যাও সীমিত। তবে অপেক্ষারত যাত্রীদের সেবায় ব্যবস্থা করা হয়েছে অতিরিক্ত চেয়ার।
 
এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বরাবরের মতো এবারও ঈদের আগের তিন দিন ও পরের তিন দিন মহাসড়কে ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
 
তাই আগের তিন দিন অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে ঈদের পরের তিন দিন মহাসড়কে ভারি মালবাহী ট্রাক, লরি ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করতে পারবে না। তবে তৈরি পোশাক ও সংশ্লিষ্ট পণ্য, পঁচনশীল দ্রব্য, ওষুধ ও জ্বালানি-বাহী যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
 
এর আগে সোমবার দুপুরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গাবতলী বাস টার্মিনালের সার্বিক অবস্থা পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের জানান, ঈদুল আজহায় ঘরে ফেরা মানুষ আগের বছরের মতো দুর্ভোগে পড়বে না। দেশের মহাসড়কগুলোতে এবার যানজট তেমন একটা থাকবে না তবে পশুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে যানবাহনগুলোর গতি কম থাকবে।
 
এসময় ওভারলোড, ওভারটেকিং ও ওভারস্পিডে গাড়ি না চালানোর জন্য চালকদের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।

জেইউ/এসকেডি/আরআইপি