আইন অনুসরণ না করে ১৮১৮ বহুতল ভবন নির্মাণ
রাজধানীর বনানী এফআর টাওয়ারে আগুন লাগার ঘটনার পর ঢাকার বহুতল ভবন পরিদর্শন করে এক হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবন পাওয়া গেছে, যেখানে কোনো আইনের অনুসরণ করা হয়নি। বিষয়টি জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্মেলন কক্ষে ‘কালের কণ্ঠ’ আয়োজিত ‘বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, অতি মুনাফা লাভের প্রবণতা থেকে আইন না মানার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। এটা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সমস্যা। এ ভবনের মালিকগণ অর্থনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। তারা কিন্তু আইন জেনেও তা মানেননি।
তিনি বলেন, দেশে আইন, নীতি ও নিয়মের ঘাটতি নেই। বাসযোগ্য নগর গড়ে তুলতে দরকার আইনের কঠোর প্রয়োগ। আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন প্রয়োজন। রাজউকের আইন আছে, পরিবেশের আইন আছে, যানবাহনের আইন আছে। কিন্তু আমরা এ আইন অনুসরণ করছি না। আমাদের যথাযথভাবে আইন অনুসরণ করতে হবে।
এ সময় দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন মন্ত্রী।
বলেন, এফআর টাওয়ারের ঘটনায় (অগ্নিকাণ্ড) ৬২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঘটনায় একটি পত্রিকার সংবাদের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ৩০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রাজউকের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করেছি। সর্বোচ্চ পর্যায়ের কাজ চূড়ান্ত করার আগে সরকারের স্বার্থে টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা এমন অনেক দুঃসাহসী কার্যক্রম গ্রহণ করছি। কিন্তু বিস্তৃত পরিসরের সব পরিবর্তন রাতারাতি করা বাস্তবসম্মত নয়।
পুরনো ঢাকার পুনঃউন্নয়ন সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর ও জাপান পুরনো সংস্কৃতি রক্ষা করে পুরনো শহরকে পুনঃউন্নয়নের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন শহর গড়ে তুলেছে। পুরনো ঢাকার ভবনগুলো ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানকার জনগণের রক্ষণশীলতা ও মমত্বের জায়গার প্রতি সম্মান রেখে বলছি, আধুনিক ব্যবস্থাপনায় পুরনো ঢাকার পুনঃউন্নয়ন কাজে নিশ্চয়ই সেখানকার জনগণ আমাদের সহযোগিতা করবেন। আমরা সেখানকার বিভিন্ন কমিউনিটির সাথে কথা বলেছি। আশা করছি, পুনঃউন্নয়ন কাজ আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব।
নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, সিটি কর্পোরেশনকে তাদের অর্জিত আয় থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যয় সংকুলান করতে হবে। এ খাতে সরকারি বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনার জন্য আমি সরকারের কাছে তুলে ধরব। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়াধীন সংস্থাগুলো এখন নিজ উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করছে। রাজউকের পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা তৃতীয় পর্ব, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুরের স্বপ্ননগরসহ প্রতিটি প্রকল্পে আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংস্থান রাখছি। প্রকল্পের মধ্যেই আমার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিষ্পত্তি করব।
তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিটি কর্পোরেশনসহ সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের বিষয়ে বারবার বলছেন। তিনি শহরে পর্যাপ্ত জলাধার রাখার কথা বলেন, খোলা জায়গা, সবুজ জায়গা রাখার কথা বলেন। আমাদের যার যার জায়গা থেকে সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশসম্মতভাবে সবকিছু করতে চান। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, গ্রামেও কৃষি জমি নষ্ট করে ইচ্ছামতো ভবন নির্মাণ করা যাবে না। দেশব্যাপী একটি মাস্টার প্ল্যানের আওতায় পরিকল্পিতভাবে সকল কাজ সম্পন্ন করতে হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর আওতাধীন সংস্থাগুলো সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ড্যাপের অসামঞ্জস্য দূর করার জন্য আমরা বারবার বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। বিল্ডিং কোড গেজেট আকারে প্রকাশ হচ্ছে অতি শিগগিরই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন চান। তিনি চান ভবন পরিবেশ সম্মত কি-না, ভবন পারিপার্শ্বিকতা রক্ষা করে কি-না, ভবনের সুদূরপ্রসারী কোনো প্রভাব আছে কি-না? নাগরিকদের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদশীল। সবাই সরকারের শুভ উদ্যোগের প্রতি আস্থা রাখুন এবং সহায়তা করুন।’
মন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষে আলোচনায় উপস্থিত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে লিখিত পরামর্শ প্রদানের অনুরোধ জানান।
দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ড. সুলতান আহমেদ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. রাশিদুল ইসলাম, কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা কামাল, বিএলডিএ মহাসচিব মোস্তফা কামাল মহিউদ্দীন, রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মঞ্জুর হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল লতিফ হেলালী, গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ, রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মদ খান প্রমুখ।
এইউএ/এমএআর/এমকেএইচ