মুল্লুকের গরুর দাম ২৫ লাখ টাকা!
পুরো শরীর কালো। মাথার মধ্যখানে একটুখানি সাদা। কান দুটো নেতিয়ে পড়েছে। শুয়ে পড়লে ওঠাতে গিয়ে রাখালরা হিমশিম খাচ্ছে। আবার দাঁড় করিয়ে না রাখলে ক্রেতাদের দেখানো মুশকিল ঠাসা শরীর। দরদাম কেমন হতে পারে আন্দাজ করতে ভিড় করছেন অনেকে। দাম জিজ্ঞেস করতেই রাখাল বললেন স্যার ২৫ লাখ। দাম শুনেই উৎসুক জনতার চোখ ছানাবড়া!
হ্যাঁ, মিথ্যে নয় সত্যি ঘটনা। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাবতলীতে এবার উঠেছে ২৫ লাখ টাকা দাম হাঁকানো একটি গরু। রোববার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে এ তথ্য। গরুটির মালিক মুল্লুক ব্যাপারী। তার দাবি, শুধু গাবতলী হাটের নয় পুরো ঢাকা শহরের ২৩টি হাটের মধ্যে সব চাইতে বেশি দামের গরু তার এটিই।
কুষ্টিয়ার সদরের চরপাড়ার ব্যবসায়ী মুল্লুক। মুল্লুক ব্যাপারী বলেই পরিচিতিটা বেশি। তার ১৪ বছরের গরু ব্যবসায় হাঁক-ডাকও অনেক। বাপ-দাদার হাত ধরেই এই পেশায় তার হাতেখড়ি। ব্যবসায় লাভ-লোকসানের পাল্লা সমানে চললেও লাভের নেশায় পারিবারিক ঐহিত্যের এ ব্যবসার হাল ছাড়েননি তিনি।
মুল্লুক ব্যাপারী জাগো নিউজকে বলেন, হাটে গরু নিয়ে এসেছেন তিনি ১১টি। এর একটির দাম ২৫ লাখ টাকা হাঁকিয়েছেন তিনি। গত দু’দিন হলো গাবতলী হাটে আসলেও আজই প্রথম তার গরুর দাম করার ক্রেতা মিলেছিল।
তিনি বলছেন, অস্ট্রেলিয়ান শংকর জাতের এ গরুটি নিজের পারিবারিক গবাদিপশুর খামারে পালিত। দামে ২৫ লাখ বললেও বিক্রির জন্য ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত নিচে নামেন তিনি। তবে ক্রেতাও কম যাননি। দুইজন ক্রেতা সাড়ে ১৩ লাখ বলেও কিনতে না পারায় ফিরে গেছেন। ১৫ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবেন মুল্লুক ব্যাপারী।
মুল্লুক ব্যাপারী আরো বলেন, তার আনা ১১টি গরুর মধ্যে কোনোটির দাম ছয় লাখের নিচে নয়। ছয় লাখ ও সাত লাখ টাকার গরুই বেশি। তবে ৮ ও ৯ লাখ টাকারও দুটি গরু রয়েছে। লাভের হিসাব জানতে চাইতেই তিনি জানান, গত বছর আটটি গরু এনে চারটি বিক্রি করতে পেরেছিলেন। চারটি বিক্রি করেও সে বছর তিনি লাভে লাল হয়েছিলেন।
তবে তার দাবি, বেশি দামের গরু আনা রিস্কি। গত বছরের লাভের গন্ধটা নাকে এখনো লেগে আছে। চারটি গরু বিক্রি করে তিনি লাভ করেছিলেন পৌনে পাঁচ লাখ টাকা। তাই সে আশায় এবার আরো বেশি দাবি গরু এনেছেন।
তিনি বলছেন, ‘খচ্চাও কম না স্যার। একেক গরুর জন্য সাত হাজার করে টাকা গুনে গুনে ভাড়া দিয়ে হয়েছে। তিনটি ট্রাক ভাড়া করে আনতে হয়েছে এবারের ১১টি গরু। ট্রাক আর হাটের খোপ (যেখানে গরু বেঁধে রাখা হয়) ভাড়াতেই খচ্চা গেছে দেড় লাখ টাকা।’
সব চেয়ে দামি যে গরুটা ওইটা ১৫ লাখে বিক্রি হলে কতো লাভ হবে জানতে চাইলে তৃপ্তি চোখে তাকিয়ে বলেন, ‘স্যার লাভ ছাড়া কি আর গরু বিক্রি করা যায়! ১৫ লাখে বিক্রি হলে তিন লাখ টাকা লাভ থাকবো।’
তবে তিনি বলেন, দুই দিন আগে গরু নিয়ে আসলেও এখনো একটিও বিক্রি হয়নি। তার দাবি, গাবতলীতে হাট পুরোদমে জমে উঠবে সোমবার (আজ) থেকে। ভারতীয় গরু আসা শুরু হলেও সংখ্যার তুলনায় অন্যান্য বারের চেয়ে কম। তাই এবার সবকটি গরুই বিক্রি হবে বলে আশা তার।
রোববার সরেজমিনে ঘুরে এবং গাবতলী পশুর হাটের ক্রেতা, হাট মালিক সমিতি ও কিছু ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রচুর সংখ্যক গরুর ট্রাক আসছে হাটে। গাবতলী হাটের অধিকাংশই কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও পাবনার ব্যবসায়ী। এর বাইরে মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, কেরানীগঞ্জ ও নওগাঁর ব্যবসায়ীও রয়েছেন।
গাবতলী হাট মালিকের ছেলে মো. রাকিব ইমরান জাগো নিউজকে জানান, গরুর দাম বেশি হলে আমাদের হাসিল বেশি হয়। দাম কমলে হাসিল কমে। তাই বেশি দামে গরু বিক্রির একটা র্যাংকিং করে পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকছে এবার।
জেইউ/বিএ