রূপকথার গল্পের মতো বিমানে ফিরলেন মোকাব্বির
>> ২৭ বছর পর বিমানে আবারও মোকাব্বির
>> সর্বনিম্ন পদ ছেড়ে ফিরলেন সর্বোচ্চ পদে
দীর্ঘ ২৭ বছর পর রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে ফিরে এলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের (বিমান ও সিএ) দায়িত্বে থাকা মো. মোকাব্বির হোসেন।
২৭ বছর আগে বিমানে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করে গেলেও এ দফায় মোকাব্বির হোসেন ফিরেছেন সংস্থাটির সর্বোচ্চ পদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হয়ে।
সিনেমার কাহিনির মতো মনে হলেও সদ্য নিয়োগ পাওয়া বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেনের চাকরি জীবনের গল্পটা এমনই বৈচিত্র্যময়। কর্মজীবনের শুরুটা তিনি করেছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মাধ্যমে।
১৯৯১ সালের মে মাসে বিমানের ম্যানেজমেন্ট এন্ট্রি লেভেলে গ্রুপ ৩ (২) গ্রেডে ‘জুনিয়র কমার্শিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ হিসেবে যোগ দেন মোকাব্বির হোসেন। বিমানে তার পরিচিতি নম্বর ছিল পি-৩৪৮১২। টানা দেড় বছর চাকরি করেন তিনি বিমানে। পরে বিসিএস (প্রশাসন) দশম ব্যাচে যোগদান করেন মোকাব্বির হোসেন। ছেড়ে দেন বিমানের চাকরি।
তবে চাকরি ছাড়লেও বিমান মোকাব্বির হোসেনকে ঠিকই মনে রেখেছে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিবের (বিমান ও সিএ) দায়িত্বে থাকা মো. মোকাব্বির হোসেনকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে মোকাব্বির হোসেন বলেন, বিমানের খুঁটিনাটি অনেক কিছুই আমার জানা। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিমানকে সন্তানের মতো লালন এবং সঠিক গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করব। সবাইকে নিয়ে কাজ করব। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
মো. মোকাব্বির হোসেন ১৯৯১ সালে বিসিএস (প্রশাসন) দশম ব্যাচে যোগ দেন। সর্বশেষ তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিভিল এভিয়েশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি যুগ্ম সচিব হিসেবে জনপ্রশাসন, অর্থ বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
গত ৩০ এপ্রিল রাতে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম মোসাদ্দিক আহমেদকে তার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে বিমানের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিলকে সে সময় দায়িত্ব দেয়া হয়।
প্রসঙ্গত, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এমডি, সিইও ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে নিয়োগের জন্য গত ১২ মার্চ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১২ বিদেশিসহ প্রায় ৭০ জন প্রার্থী এ পদের জন্য আবেদনপত্র জমা দেন। তবে গত ছয় মাসেও আবেদনকারীদের মধ্য থেকে কাউকে চূড়ান্ত করতে পারেনি বিমান কর্তৃপক্ষ।
আবেদনকারীদের মধ্য থেকে নাকি নতুন কোনো পদ্ধতিতে এ পদে নিয়োগ দেয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ৩ সেপ্টেম্বর বোর্ড সভায় আলোচনা করে পরিচালনা পর্ষদ। জানা গেছে, বোর্ড সভায় অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনকে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব ওঠে।
বিমানের পরিচালনা পর্ষদ সদস্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘বিমান বোর্ড এমডি নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। কিন্তু আবেদনকারী দেশি-বিদেশি কাউকেই এ পদের যোগ্য হিসেবে পাওয়া যায়নি। এজন্য বিমান বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিমানের এমডি পদে অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেনকে নিয়োগের আদেশ দেয়।’
আরএম/এমএআর/পিআর