ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

বাবার পর ছেলেকেও চাপা দিল ভিক্টর পরিবহন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:২৬ পিএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ভিক্টর পরিবহনের বাসের চাপায় সংগীত পরিচালক পারভেজ রবের মৃত্যুতে শোকাহত পরিবার। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল। অন্যদিকে নিহত রবের পরিবারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় ভিক্টর পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে বন্ধু ছোটনকে নিয়ে রবের ছেলে আলভী আব্দুল্লাহপুরে উদ্দেশ্যে রওনা হলে একই পরিবহনের আরেকটি বাস তাদের চাপা দেয়। ওই ঘটনায় আলভীর বন্ধু ছোটন মারা যান।

গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) উত্তরার তুরাগে ভিক্টর পরিবহনের আরেকটি বাসের চাপায় সংগীত পরিচালক পারভেজ রব নিহত হন। পারভেজ রবের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতের দুর্ঘটনায় মারা যান আলভীর বন্ধু ছোটন (২০)। আলভীর (১৯) অবস্থাও সংকটাপন্ন। রাজধানীর শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারে তাকে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহত ছোটন ও আহত আলভীর পরিবার জানায়, শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) উত্তরার কামারপাড়া এলাকায় আলভীদের বাসার সামনে ভিক্টর পরিবহন কর্তৃপক্ষ দলবল নিয়ে আসেন। গত ৫ সেপ্টেম্বরের দুর্ঘটনার বিষয়টি তারা সমঝোতা করতে চান। একপর্যায়ে আলভীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান ভিক্টর পরিবহনের লোকজন।

পরে নিহত রবের স্ত্রী (আলভীর মা) রুমা বেগম তুরাগ থানায় মামলা করতে যান। অন্যদিকে ছেলে ইয়ামিন আলভী (১৯) বন্ধু মেহেদী হাসান ছোটনকে (২০) সঙ্গে নিয়ে আব্দুল্লাহপুর বাজারের উদ্দেশে রওনা হন। পথেই ভিক্টর পরিবহনের আরেকটি বাস তাদের চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে মারা যান ছোটন। মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে আলভীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে শ্যামলীর ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করা হয়। বাসচাপায় আলভীর পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে। ডান হাতের একটি আঙুলও কেটে পড়ে গেছে।

ওই ঘটনায় ঘাতক বাসটি (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৮৬৭০) জব্দ করাসহ প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্যান্য যাত্রীদের সহযোগিতায় চালক রফিকুল ইসলামকে আটক করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। শনিবার রাতেই নিহত ছোটনের মামাতো ভাই ফিরোজ আলম বাদী হয়ে ঘাতক বাসের চালক রফিকুল ইসলাম, হেলপার সোহেল ও কনটাক্টর মোমেনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৯।

মামলার পর রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চালক রফিকুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাদেক জাগো নিউজকে বলেন, বাজার করার উদ্দেশ্যে আলভী ও ছোটন আব্দুল্লাপুরে যাচ্ছিল। সুইসগেট থেকে আব্দুল্লাহপুর যাওয়া পথে আফসার কাউন্সিলের পুরাতন বাড়ির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বাসটিতে তারা দু’জন ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের দেখে ইচ্ছাকৃতভাবে বাসের দরজা আটকে দিয়ে আরেকটি বাসের সঙ্গে চাপ দেয়। এতে দু’জনই আহত হন। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেয়ার পর ছোটন মারা যান। আহত আলভীকে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে শ্যামলী ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যায় তার পরিবার।

মেহেদী হাসান ছোটনের মরদেহ রাতেই সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত ছোটন উত্তরা টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বলে জানান এসআই সাদেক।

এসআই সাদেক আরও বলেন, এ ঘটনার আগের ঘটনা (পারভেজ রবের মৃত্যু) আমরা জানতাম না। নিহত ছোটনের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, গত বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) উত্তরার তুরাগে একই ভিক্টর পরিবহনের আরেকটি বাসের চাপায় সংগীত পরিচালক পারভেজ রব নিহত হন। যিনি গতকাল রাতের দুর্ঘটনায় আহত আলভীর বাবা।

এদিকে উত্তরা পশ্চিম থানার এক কর্মকর্তা বলেন, পারভেজ রবের মৃত্যুতে বিক্ষুব্ধ হয়ে রাতে ভিক্টর পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাসে ভাঙ্চুর চালায় নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা। হামলা থেকে বাঁচতে ভিক্টর পরিবহনের ওই চালক পালাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা (আলভী ও ছোটন) ঘটায়।

আলভীর মা রুমা মুটোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি হত্যার বিচার চাওয়ার মতো শক্তি আমার নাই। আমার সামনের দিনগুলো অন্ধকার। স্বামী হারানোর শোকের মধ্যে ছেলেকেও হারাতে বসেছি। আমি কোথায় যাব, কার কাছে যাব? সমঝোতা করতে চাইনি বলেই ওরা আবারও হত্যার চেষ্টা করল। আমার ছেলে না মরলেও তার বন্ধু মারা গেল। ছেলেও এখন পঙ্গু। আমি দুই ঘটনারই দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

জেইউ/আরএস/জেআইএম

আরও পড়ুন