ছেলেটার জন্য বাঁচতে ইচ্ছা করে ক্যান্সার আক্রান্ত শরিফুলের
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ই ব্লকের পঞ্চম তলায় পেলিয়েটিভ ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে আছেন ক্যান্সারে আক্রান্ত শরিফুল নামের এক যুবক। বয়স খুব বড় জোর বছর ত্রিশেক হবে। সুঠাম দেহের অধিকারী এ যুবককে দেখে বোঝার উপায় নেই অল্প বয়সে তিনি শুধু ক্যান্সারেই আক্রান্ত হননি, মেরুদণ্ডের টিউমার অপারেশনের পর কোমড় থেকে পা পর্যন্ত প্যারালাইজড হয়ে গেছে তার। প্যারালাইজড শরীর নিয়ে বিছানায় সারাদিন শুয়ে থাকেন। তার বেডের চারপাশে সারাদিন ঘুর ঘুর করে পাঁচ বছর বয়সী তার ছেলে। শিয়রে বসে থাকেন তার স্ত্রী।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর আনুমানিক ১২টায় পেলিয়েটিভ মেইল ওয়ার্ডে আলাপকালে শরিফুল এ প্রতিবেদককে জানান, ছয়মাস আগে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। মেরুদণ্ডের টিউমার অপারেশন করার পর তার কোমড়ের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়। ক্যান্সার দ্রুত সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যান্সারে নড়াচড়া করতে না পারলেও একমাত্র সন্তান ছোট্ট ছেলেটার জন্য এখনও বাঁচার স্বপ্ন দেখেন।
শরিফুল জানালেন, তিনি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী জাহাজে সুকানির চাকরি করতেন। আয় রোজগারও ভালো ছিল। স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল। কিন্তু ছয়মাস আগে তার ক্যান্সার ধরা পড়লে সব তছনছ হয়ে যায়।
ক্যান্সার ধরা পড়ার প্রথম দিকে কবিরাজি চিকিৎসা, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজ ও গাছ-গাছড়ার নানা রকম চিকিৎসা করিয়েছেন। জিন-ভূতের মাধ্যমে চিকিৎসায় রোগ সারানেোর জন্য হাজার হাজার টাকাও খরচ করেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। পরে বাধ্য হয়েই বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর এখন বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত ২৮ আগস্ট বিএসএমএমইউর পেলিয়েটিভ ওয়ার্ডে ভর্তি হন। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। সারাদিন শুয়ে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগে না। তবুও ছেলেটার জন্য বাঁচতে ইচ্ছে করে বলে জানালেন শরিফুল ইসলাম। তিনি বললেন, জানি না আমি শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারব কি না! তবে এই আমার এই একমাত্র ছোট্ট ছেলেটার জন্য খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে।
উল্লেখ্য, পেলিয়েটিভ ওয়ার্ডে জটিল রোগে আক্রান্ত মুমূষু রোগীদের ভর্তি করা হয়। ব্যথানাশক ইনজেকশন ও ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে রোগীকে ব্যথাহীন মৃত্যু হতে সহায়তা করে এ ওয়ার্ড।
এমইউ/এসআর