বাংলাদেশে যত গুজব
গুজব। দেশ-বিদেশে এ শব্দ খুবই পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে একদল লোক গুজব ছড়িয়ে থাকে। গত কয়েকদিন আগেও দেশে গুজব রটে যে, ১০০ টাকার নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়, এটি একটি গুজব।
অতি সম্প্রতি যে গুজবে দেশে গণপিটুনিতে বহু মানুষের মৃত্যু, তা হলো- ‘পদ্মা সেতুতে শিশুর মাথা লাগবে এবং ছেলেধরা’। এ ছাড়া দেশে চলা ভয়াবহ ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে গুজব ছড়ায় বেসিনে হারপিক ঢাললে এডিস মশা মরবে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার গুজবও রটে এ দেশে। দেশের আরেকটি আলোচিত গুজব ছিল জামায়াত নেতা সাঈদীকে চাঁদে দেখা। এভাবে বারবার গুজব ছড়াচ্ছে দেশে।
আলোচিত কয়েকটি গুজব
১০০ টাকার নোট
৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিযুক্ত ১০০ টাকার একটি নোটের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে এটি গুজব বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকের মাধ্যমে ১০০ টাকা মূল্যমানের নতুন মুদ্রিত নোটের ছবি পাওয়া যাচ্ছে। এ নোটের সম্মুখভাগের বাম পাশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পেছনভাগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ছবি রয়েছে। ফেসবুকে কতিপয় আইডির মাধ্যমে এ তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যা অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি কতৃক শেয়ার করা হচ্ছে। এটি ভুয়া।’
ডেঙ্গু প্রতিরোধে হারপিক
জুলাই মাসে গুজব ছড়ায় যে ৫০০ গ্রাম হারপিক ও ৫০০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার একযোগে ঢাললে ড্রেনে যত মশা আছে সব মরে যাবে। ফেসবুকে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিশেষজ্ঞরা জানান, এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। হারপিকের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও বলে এটা গুজব।
পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে বলে গত জুলাইয়ের শুরুতে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। পরে এর বিরুদ্ধে সতর্ক করে সেতু কর্তৃপক্ষ। পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গুজবের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে বলা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় যে, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা লাগবে বলে একটি মহল সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
ছেলেধরা গুজব
পদ্মাসেতুতে মানুষের মাথা লাগবে এই গুজব ছড়িয়ে পড়লে আরেকটি গুজব ছড়ায়, তা হলো সেতুতে শিশুদের মাথা লাগবে। আর এ জন্য শিশুদের ধরে নেয়া হচ্ছে এবং তাদের মাধা কাটা হচ্ছে। এই ‘ছেলেধরা’ গুজব ছড়িয়ে পড়লে সারােদেশে শুরু হয় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি। গণপিটুনিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে অনেকে নিহত হয়েছেন। পরে এ নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করে সরকার। এই গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বিদ্যুৎ বন্ধ
ছেলেধরা গুজবের রেশ না কাটতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তিনদিন বিদ্যুৎ বন্ধ রেখে বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে ম্যাসেঞ্জারেরর মাধ্যমে গুজব ছাড়িয়ে পড়ে। পরে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, এই খবরটি সঠিক নয়।
নিখোঁজ স্যাটেলাইট
গত বছরের নভেম্বরে দেশে ছড়িয়ে পড়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিখোঁজের’ গুজব। পরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘গুজব প্রতিরোধ ও অবহিতকরণ সেল’ থেকে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিখোঁজ বলে প্রচার করা হয়। ফ্রান্সের থ্যালাস এলেনিয়া স্পেস কোম্পানি স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বাংলাদেশকে বুঝিয়ে দিয়েছে। এই স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রতিদিন সফলভাবে অনুষ্ঠান প্রচার করছে।
‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিখোঁজ’ শিরোনামে একটি খবর বেনামি কিছু ওয়েবপোর্টাল ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি গুজব।
হেফাজত
ঢাকার শাপলা চত্বরে যৌথ বাহিনীর অপারেশনে হেফাজতে ইসলামীর কর্মীদের মৃতের সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, গণমাধ্যমের সামনে ওই অপারেশন পরিচালিত হয়, নিহতের ব্যাপারে যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা গুজব।
মোটরযান আইন
সংশোধনী মোটরযান আইন অনুযায়ী জরিমানার পরিমাণ সর্বোচ্চ এক হাজার গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তা ঠিক নয় বলে জানানো হয়।
ধর্ম অবমাননার গুজব
২০১২ সালে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হয়। বাংলাদেশের আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় একই ধরনের ঘটনা ঘটে।
চাঁদে সাঈদী
২০১৩ সালের মার্চে চাঁদে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চেহারা দেখা গেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। তখন দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে বলে মসজিদ থেকে একযোগে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির কর্মীরা দেশেজুড়ে তাণ্ডব চালায়, গুলি ছুড়তে বাধ্য হয় পুলিশ। পরে অনেক মসজিদের ইমাম বলেন, ‘যারা এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে, তাদের ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। যারা এ ধরনের অপপ্রচারে বিব্রত হবেন, তাদের ইমান থাকবে না। নষ্ট নয়ে যাবে।’
জেডএ/জেআইএম