ভূমিকম্প সহনীয় হবে দেশ, শুরুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন
‘জাপানে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ভূমিকম্প হতো এবং এতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হতো। কিন্তু তা এখন হয় না। এজন্য জাপান তাদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলেছে। অনেক উঁচু ভবনকে ভূমিকম্প সহনীয় করতে রেট্রোফিটিং করেছে। ৭০-৮০ তলা ভবনের নিচে তারা রাবারপ্যাড দিয়েছে, যাতে ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি মূল ভবনে না লাগে। জাপানি প্রকৌশলী ও স্থাপত্যবিদদের এমনভাবে তারা ডিজাইন শিখিয়েছে, ওই ডিজাইন মতো ভবন করলে সেটা ভূমিকম্প সহনীয় হবে।’
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে আয়োজিত ভূমিকম্প প্রস্তুতি কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চারটি পৃথক সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।
বাংলাদেশকে জাপানের মতো ভূমিকম্প সহনীয় দেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য একটি প্রকল্প নিয়ে আসা হচ্ছে। অর্থ ও কারিগরি সহায়তার জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে। এ বিষয়ে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হলে বা বিষয়টি চূড়ান্ত হলে প্রথমে রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন ও কার্যালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ভূমিকম্প সহনীয় করা হবে।
এনামুর রহমান বলেন, ‘একবার (ভূমিকম্পে) হাইতির পুরো দেশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রপতির ভবনসহ ধসে যায়। ছোট দেশ হাইতি, লোক সংখ্যা কম, তারপরও দুই লাখ লোক মারা যায়। আমাদের দেশে কত লোক মরা যাবে, একবার চিন্তা করেন!’
পর্যায়ক্রমে কীভাবে কাজ বাস্তবায়ন করা হবে তা ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আগে আমাদের বঙ্গভবন ও গণভবনকে ভূমিকম্প সহনীয় করতে চাই। ভূমিকম্প হলে আমাদের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যদি মারা যায়, তাহলে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করার কেউ থাকবে না। তারপরে আমাদের সচিবালয়গুলোকে ভূমিকম্প সহনীয় করে দেব। কারণ সচিবরা মারা গেলে আমলাতান্ত্রিক কার্যক্রম, যারা রাষ্ট্রকে পরিচালনা করে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। তারপরে স্কুল, কলেজগুলোকে করে দেয়া হবে। যাতে ভূমিকম্পে আমাদের নতুন প্রজন্ম মৃত্যুবরণ না করে। তারা মারা গেলে দেশের দায়িত্ব নেয়ার কেউ থাকবে না। তারপরে শিল্পকারখানা ও আবাসিক ভবনগুলো আমরা ভূমিকম্প সহনীয় করে গড়ে তুলবে। যে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলো ধ্বংস করব এবং তাদেরকে বিনাসুদে ঋণ দেয়া হবে, যাতে করে তারা তাদের ঘরবাড়ি ভূমিকম্প সহনীয় করে নিতে পারে।’
সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে এক সেমিনারে অংশ নেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। সেখানে জাইকার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রতিমন্ত্রীর প্রথম কথা হয়।
দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত বলেন প্রতিমন্ত্রী। শোনার পর প্রধানমন্ত্রী অর্থনেতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও পূর্ত মন্ত্রণালয়কে নিয়ে কাজে নেমে যাওয়ার পরামর্শ দেন বলেও জানান এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সচিব ইতোমধ্যে ইআরডিকে চিঠি লিখেছেন। আমরা পূর্ত মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
গত ২১ জুলাই এই বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে জাইকা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠক হয় প্রতিমন্ত্রীর। তৃতীয় বৈঠক সভার একটা সম্ভাব্য সময় ঠিক করা হয়েছে। তৃতীয় সভায় সমঝোতা স্মারক সই হবে এবং তারপর কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘জাপান আমাদেরকে বারবার বলেছে, আপনারা ঘাবড়াবেন না। কত টাকা লাগে, আমরা দেব। আমরা ২৫ থেকে ৫০ বছর মেয়াদি ঋণ দেব। সুদ হবে একেবারে অল্প। যেটা আপনাদের জন্য বোঝা হবে না। তোমরা শুধু আমাদেরকে দায়িত্ব দাও, আমরা করে দেব।’
প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘ভূমিকম্প সহনীয় করতে জাপানের ৩০ বছর লেগেছে, আমাদের হয়তো ৫০ বছর লাগবে। এই কাজ শুরু হলে হয়তো আমরা দেখে যেতে পারব না, আমাদের নতুন প্রজন্ম ভূমিকম্প সহনীয় দেশ পাবে।’
এ সময় বিদেশি অতিথিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পিডি/এসআর/পিআর