ডেঙ্গু নিয়ে প্রশ্ন শুনেই হট্টগোল শুরু কাউন্সিলরদের
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা ও অনুমোদন শেষ। এবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের পালা। একটি অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক মেয়রকে প্রশ্ন করেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হওয়ার পরও মশা নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলরদের কেন মাঠে দেখা যায়নি? মেয়র উত্তর দেয়ার আগেই সেই সাংবাদিককে থামিয়ে দেন ডিএসসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। শুরু হয় হট্টগোল। কেউ কেউ ‘মিথ্যা মিথ্যা’, ‘থাম সাংবাদিক’ ইত্যাদি বলে চিৎকার শুরু করেন।
হাত তুলে প্রতিবাদ করছিলেন তারা। একপর্যায়ে দাঁড়িয়ে যান কয়েকজন কাউন্সিলর। সাংবাদিকদের কটূক্তি করতে থাকেন। সাংবাদিক ও সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা এ সময় কাউন্সিলরদের থামানোর চেষ্টা করলেও তারা চিৎকার চেচামেচি বন্ধ করছিলেন না। শেষ পর্যন্ত স্টেজে মাইক অন করে কাউন্সিলরদের ‘ধমক’ দেন মেয়র সাঈদ খোকন।
এরপরও থামছিলেন না কাউন্সিলররা। এবার সিট থেকে ওঠে খালি গলায় উচ্চস্বরে মেয়র বলেন, ‘এই থামেন, বসেন। উনারা (সাংবাদিক) আমার ইনভাইটেড গেস্ট। আপনারা সম্মানিত কাউন্সিলর। আপনাদের সাথে সিটি কর্পোরেশনের মানসম্মান জড়িত। আশ্চর্য! অবাক লাগছে, আপনারা কীভাবে এমন করতে পারেন।’
পরে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা মেয়র সাঈদ খোকনকে আসনে বসান। এর আগে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে বাজেট ঘোষণা করেন মেয়র সাঈদ খোকন। চলতি মেয়াদে এটাই তার শেষ বাজেট ঘোষণা।
বাজেট বক্তব্যে মেয়র বলেন, ‘মাদক, জুয়া, অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হওয়া নগরীর বেদখল পার্ক, খেলার মাঠগুলো আজ জলসবুজ প্রকল্পের আওতায় বিশ্বমানের করে দৃষ্টিনন্দন রূপে সাজানো হয়েছে। নগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ সড়ক এখন চলাচল উপযোগী। ফুটপাত, ড্রেন সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে।’
মেয়রের এ বক্তব্যের পর এক সাংবাদিক মেয়রকে প্রশ্ন করেন, ৯০ শতাংশ চলাচলের উপযোগী বললেও রাজধানীর অধিকাংশ সড়ক ও অলিগলি চলাচলের অনুপযোগী। আপনার কাউন্সিলরকে ঠিক করতে বললে তিনি বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন বরাদ্দ দেয় না।’
ওই সাংবাদিক তার এলাকা কাঁঠালবাগানের কথা জানালে সেই এলাকার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহমেদ ঢালীকে দাঁড় করান মেয়র। তিনি জানতে চান, রাস্তা ঠিক হচ্ছে না কেন?
কাউন্সিলর জবাবে বলেন, দুই বছর ধরে রাস্তার বেহাল দশা। সিটি কর্পোরেশনে বললেও কোনো কাজ হয়নি।
এরপর সেই এলাকার সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল অঞ্চল কর্মকর্তা শফিউল সিদ্দিক ভূইয়াকে দাঁড় করিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান মেয়র। মেয়র বলেন, ‘কেন হয়নি? বলুন, আমি আপনাকে বরখাস্ত করব।’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘টেন্ডার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এ সময় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামানকে দাঁড় করিয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চান মেয়র। তার উত্তরও একই ছিল। তখন ওই সড়কসহ অন্যান্য সড়ক দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেন মেয়র সাঈদ খোকন।
২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য মোট ৩ হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। বাজেটে মশক নিয়ন্ত্রণের জন্য ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত বছর সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
বাজেটে জ্বালানিসহ মশক নিধনের ওষুধের জন্য ৩৮ কোটি টাকা, কচুরিপানা, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যার জন্য ১ কোটি ৩০ লাখ এবং ফগার, হুইল, স্প্রে মেশিন পরিবহনের জন্য ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এআর/এএস/আরএস/জেআইএম