ডেঙ্গু : আগস্ট ভেঙে দিল ১৯ বছরের রেকর্ড
চলতি বছর শেষ হতে এখনও চার মাস বাকি থাকলেও ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭০ হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ-শিশুর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির নতুন রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে। গত ১৯ বছরে (২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত) সারাদেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ১৭৬।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, চলতি আগস্ট মাসে প্রায় ৫২ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফলে চলতি আগস্টে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা গত ১৯ বছরে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
সরকারি হিসাবে এ বছর আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫২ জনের নিশ্চিত মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বলে দাবি করা হচ্ছে।
বিভিন্ন কারণে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি, দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়া, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের লক্ষণ ও ডেঙ্গুর ধরন পরিবর্তন, আক্রান্ত রোগীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ও মৃত্যু ইত্যাদি নানা কারণে স্বাস্থ্য সেক্টরের ইতিহাসে ঠাঁই করে নিচ্ছে।
এই প্রথমবারের মতো স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় সাধারণ মানুষ যেন অপেক্ষাকৃত কম খরচে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের পরীক্ষা করাতে পারে সে জন্য সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা এবং বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অপেক্ষাকৃত কম খরচে রক্ত পরীক্ষার সুযোগ করে দিতে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে। দ্রুততম সময়ে বিদেশ থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট আমদানি করা হয়।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি হাসপাতালে ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়। মেডিসিনসহ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় জাতীয় গাইডলাইন প্রণীত হয়। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরে তথ্য জানানোর জন্য হটলাইন খোলা হয়। ডেঙ্গু সন্দেহে মৃত রোগীদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে ডেথ রিভিউ কমিটি গঠন করে ওইসব রোগীর মৃত্যু রিভিউ করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা গাইডলাইন মেনে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য একাধিক কমিটি গঠন করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫৫১ জন, ২৪৩০ জন, ৬২৩২ জন, ৪৮৬ জন, ৩৪৩৪ জন, ১০৪৮ জন, ২২০০ জন, ৪৬৬ জন, ১১৫৩ জন, ৪৭৪ জন, ৪০৯ জন, ১৩৫৯ জন, ৬৭১ জন, ১৭৪৯ জন, ৩৭৫ জন, ৩১৬২ জন, ৬০৬০ জন, ২৭৬৯ জন এবং ১০১৪৮ জন।
একই সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সংখ্যা যথাক্রমে- ৯৩ জন, ৪৪ জন, ৫৮ জন, ১০ জন, ১৩ জন, চারজন, ১১ জন, শূন্য, শূন্য, শূন্য, শূন্য, ৮ জন, একজন, দুইজন, শূন্য, ৬ জন, শূন্য, ১৪ জন, ৮ জন এবং ১৪ জন ও ৫২ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও এখন পর্যন্ত ৯৩ শতাংশ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
৩০ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ৬৯ হাজার ৪৩৫ রোগীর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৪ হাজার ৫৫৮। গতকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বসাকুল্যে চার হাজার ৬৯৭ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৬১০ ও অন্যান্য বিভাগে দুই হাজার ৮৭ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ ৩০ আগস্ট (শুক্রবার) সকাল ৮টা থেকে আজ ৩১ আগস্ট (শনিবার) সকাল ৮টা পর্যন্ত ৭৬০ জন রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রাজধানী ঢাকার হাসপাতালে ৩৪৯ ও ঢাকার বাইরের হাসপাতলে ৪১১ জন।
এমইউ/বিএ/এমকেএইচ