ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সংসদ কার্যকর করতে টিআইবির একগুচ্ছ সুপারিশ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:০৫ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯

‘বিরোধী দলের সংসদ অধিবেশন বর্জনের যে সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল গত দশম সংসদ তা থেকে বের হয়ে আসলেও তা হয়েছিল অনেক উচ্চমূল্যের বিনিময়ে।’ এ মন্তব্য করে সংসদকে কার্যকর করতে একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

পাঁচ ভাগে বিভক্ত এই সুপারিশমালায় সংসদকে কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করা, ‘সংসদ সদস্য আচরণ আইন’প্রণয়ন করা এবং কার্যকর বিরোধী দলের অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত হয় এমন সংসদ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।

বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এসব সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দশম জাতীয় সংসদে কোরাম সংকটের কারণে ক্ষতি হয়েছে ১৬৩ কোটি ৫৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৩ টাকা। গত সংসদের প্রথম থেকে ২৩তম অধিবেশনের (জানুয়ারি ২০১৪ থেকে অক্টোবর ২০১৮) ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় বলা হয়, উল্লিখিত সময়ে কোরাম সংকট ছিল ১৯৪ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পরিসংখ্যানগত বিভিন্ন ক্ষেত্রে দশম সংসদ ইতিবাচকতা থাকলেও কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতি, আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত আলোচনায় সংসদ সদস্যদের তুলনামূলক কম অংশগ্রহণ, সংসদীয় কমিটির প্রত্যাশিত কার্যকারিতা, সংসদীয় উন্মুক্ততার ঘাটতি এবং স্পিকারের জোরালো ভূমিকার ঘাটতির ফলে সুশাসন ও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে দশম জাতীয় সংসদে ব্যাপক ঘাটতি ছিল।

দশম জাতীয় সংসদের ২৩টি অধিবেশনের নানা তথ্য তুলে ধরে গবেষণার পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে সংসদকে অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র পক্ষ থেকে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়।

সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সংসদ সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করাসহ সদস্যদের জন্য ‘নির্দেশিকা পুস্তক’ তৈরি করা; সংসদে অধিকতর শৃঙ্খলা রক্ষাসহ অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারকে বিধি অনুযায়ী রুলিং দেয়াসহ অসংসদীয় ভাষা এক্সপাঞ্জ করার ক্ষেত্রে আরও জোরালো ভূমিকা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো সদস্যদের আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সংসদে উপস্থাপন করা, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকাশযোগ্য নয় এমন বিষয় ব্যতীত অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোর বিস্তারিত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

সংসদীয় কার্যক্রমে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইনের খসড়ায় জনমত গ্রহণের জন্য অধিবেশনে উত্থাপিত বিলগুলো সংসদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এবং এর জন্য পিটিশন কমিটিকেও কার্যকর করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সুপারিশে আরও রয়েছে-

সংসদীয় কমিটির কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য কোনো কমিটিতে সদস্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া গেলে ওই কমিটি থেকে তাদের সদস্যপদ বাতিল করা, বিধি অনুযায়ী কমিটির প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ করা, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত কমিটিসহ জাতীয় বাজেটে তুলনামূলকভাবে বেশি আর্থিক বরাদ্দপ্রাপ্ত শীর্ষ দশটি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিগুলোর মধ্যে অর্ধেক কমিটির সভাপতি হিসেবে বিরোধীদলীয় সদস্যদের মনোনয়ন দেয়া, কমিটি সভার প্রদত্ত সুপারিশের আলোকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থা এবং ব্যবস্থা গৃহীত না হলে তার বিস্তারিত মন্তব্য/ব্যাখ্যা লিখিতভাবে কমিটির পরবর্তী সভায় (বিধি অনুযায়ী এক মাসের মধ্যে) জানানোর বিধান করার সুপারিশ করেছে টিআইবি।

তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সংসদ অধিবেশনে সদস্যদের উপস্থিতি, বিধি অনুযায়ী কমিটি প্রতিমাসে একটি সভা করতে ব্যর্থ হলে তার ব্যাখ্যাসহ প্রতিবেদন এবং কমিটির প্রতিবেদনসহ সংসদীয় কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এবং ওয়েবসাইটের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করা, বাৎসরিক সংসদীয় ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করা, সদস্যদের সম্পদের প্রতিবছরের হালনাগাদ তথ্যসহ সংসদের বাইরে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য স্বঃপ্রণোদিতভাবে উন্মুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিরোধী দলের সংসদ অধিবেশন বর্জনের যে সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, দশম সংসদ তা থেকে বের হয়ে আসলেও তা হয়েছিল অনেক উচ্চমূল্যের বিনিময়ে। সংসদে বিরোধী দল বলতে যা বোঝায় সেরকম দলের অনুপস্থিতিতে দশম সংসদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আশা জাগানিয়া তেমন কিছু দেখি নাই। একদিকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও সরকার দলের একচ্ছত্র আধিপত্য এবং অন্যদিকে কার্যকর বিরোধী দলহীন সংসদ এ দু’টি অভূতপূর্ব ও ব্যতিক্রমী বিষয় পেয়েছি। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশের সংসদের জন্য অপরিহার্য বিরোধী দলকে আমরা দশম সংসদে সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকায় দেখতে পাইনি।

‘একদিকে সরকারের অংশবিশেষ ও অন্যদিকে কথিত বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত হওয়ায় তাদের এক ধরনের আত্মপরিচয়ের সংকট ছিল।’

তিনি বলেন, আইন প্রণয়ন ও সংবিধান সংশোধনের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালিত হয়েছে। অন্যদিকে অধিকাংশ (৭১%) আইনই গড়ে ১-৩১ মিনিটের মধ্যে পাস হয়েছে। এটি সংসদ সদস্যদের মূল দায়িত্ব আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহের ঘাটতির প্রকট দৃষ্টান্ত। পাস হওয়ার আগে কোনো আইন পড়ে দেখা বা অর্থবহ আলোচনা করে ভোট দেয়ার বিষয়ে তারা কতটা আন্তরিক বা কতটুকু পারদর্শী সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা- নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুলিয়েট রোজেটির তত্ত্বাবধানে এই গবেষণা পরিচালনা ও প্রতিবেদন প্রণয়ন করেন ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোরশেদা আক্তার, নিহার রঞ্জন রায়, ফাতেমা আফরোজ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার অমিত সরকার।

এইচএস/জেডএ/পিআর

আরও পড়ুন