ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ফল-সবজির আড়ালে পিকআপ-প্রাইভেটকারে ফেনসিডিল সরবরাহ

জসীম উদ্দীন | প্রকাশিত: ১১:৫৯ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০১৯

রফিকুল ইসলাম পেশায় পিকআপ চালক। পিকআপে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও দিনাজপুর এলাকা থেকে ফলমূল, কাঁচামাল ও সবজি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। তবে এর আড়ালে ইয়াবা ও ফেনসিডিলের চালান ঢাকার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করে আসছিলেন তিনি।

রোববার ফেনসিডিলের একটি চালান ঢাকায় পৌঁছাতে গিয়ে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হাতে ধরা পড়ার পর জানা যায়, শুধু তিনি নন, আরও বেশ কয়েকজনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র যাত্রী পরিবহন কিংবা মালামাল বহনের আড়ালে মাদকের চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।

শনিবার (২৪ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিবে র‌্যাব-১ এর পৃথক দুটি অভিযানে রাজধানীর অদূরে টঙ্গী ও রাজধানীর উত্তরা হতে এক হাজার ৬শ বোতল ফেনসিডিলসহ ৮ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার এবং মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত ২টি পিকআপ ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জাগো নিউজকে বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানাধীন এরশাদ নগরের ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে অভিযান পরিচালনা করে মাদক চোরাকারবারী বাপ্পী হোসেন বেলাল (২৫), সুমন গাজী (৩২), ফিরোজ কবির (২২), মেহেদী হাসান মুন্না (২২), ও সোলায়মান আলী (১৮) নামে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের চালিত পিকআপ ও প্রাইভেটকার জব্দসহ তল্লাশি করে ৬৪৪ বোতল ফেনিসিডিল ও ৬টি মোবাইলফোন জব্দ করা হয়।

southeast

জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার সকাল ৯টার দিকে অপর অভিযানে উত্তরা পূর্ব থানাধীন মহাসড়কের সী শেল রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে একই চক্রের জুয়েল রানা (২৮), রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও মিরাজ হোসেন ওরফে বাবু (২৭) নামে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের চালিত পিকআপ জব্দসহ তল্লাশি করে ৯৫৭ বোতল ফেনিসিডিল ও নগদ পৌনে ২ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-১ সিও বলেন, গ্রেফতাররা সবাই একটি সংঘবদ্ধ মাদক চোরাচালানকারী চক্রের জড়িত। তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত হয়ে ভারত হতে চোরাচালানের মাধ্যমে ফেনসিডিল নিয়ে আসে। পরে পিকআপ ও প্রাইভেটকারে করে ঢাকায় পৌঁছায়।

চক্রের অন্যতম সদস্য দিনাজপুরের মাদক ব্যবসায়ী বাপ্পী হোসেন বেলাল। তিনি ভারত হতে ফেনসিডিলের চালান নিয়ে আসেন। এরপর বাপ্পীর কাছ থেকে গ্রেফতার ফিরোজ কবির, মেহেদী হাসান ও সোলায়মান পিকআপ ও প্রাইভেটকারে ঢাকায় নিয়ে আসেন। পরে মাদকদ্রব্যের চালানটি ঢাকায় নিয়ে আসার পর ঢাকাস্থ মাদকের সিন্ডিকেটের সুমন গাজীর নিকট হস্তান্তর করেন।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার মাদক ব্যবসায়ীরা জানায়, দীর্ঘদিন যাবত দিনাজপুর জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হতে মাদকের চালান আনার নেপথ্যের মূল হোতা সুমন গাজী ও বাপ্পী হোসেন বেলাল। ফেনসিডিলের চালান ভারত হতে নিয়ে আসার পর তা পিকআপে কাঁচামাল, ফল, শাকসবজি পরিবহনের আড়ালে ঢাকায় পাঠাতো। ঢাকায় বসে সুমন গাজী রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সরবরাহ করে আসছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ফিরোজ কবির জানায়, তিনি পেশায় একজন পিকআপচালক। এই চক্রের সক্রিয় সদস্য তিনি। দিনাজপুর থেকে মাদকের চালান ঢাকাস্থ বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছানোর কাজ করেন। প্রতি চালানের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা পেতেন। মাদক পরিবহনে সোলায়মান আলী (১৮) তার সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

southeast

মেহেদী হাসান মুন্না পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। প্রাইভেটকারে যাত্রী পরিবহনের আড়ালে মাদকদ্রব্য ফেনসিডিলের চালান দিনাজপুর তেকে ঢাকায় নিয়ে আসা তার মূল কাজ। সেও এই জন্য ১৫ থেকে ২০ হাজার করে টাকা নিতো।

শহিদুল, দুলাল, বাবু ও ছোট বাবু নামে মাদক ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে ফেনসিডিলের চালান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পার করে দিতেন। রফিকুল ও মিরাজ হোসেন তা পিকআপে করে ঢাকায় পৌঁছে দিতো। ঢাকাস্থ মাদকের সিন্ডিকেটের জুয়েল তা নিয়ে পাইকারদের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসতো।

গ্রেফতার জুয়েল জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ২০০৮ সালে ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি পেশায় একজন মর্টার ব্যবসায়ী। মাদকাসক্ত জুয়েল পরিবার বিচ্ছিন্ন। মর্টার ব্যবসার পাশাপাশি জনৈক কামরুলের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন। স্বল্প সময়ে অধিক টাকার মালিক হওয়ার আসায় সে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে বলে জানায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হতে মাদকের চালানটি গ্রহণ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন তিনি।

র‌্যাব-১ সিও বলেন, গ্রেফতারদের বিশদ জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।

জেইউ/এমএসএইচ

আরও পড়ুন