চুরি তাদের ডিউটি পুলিশ ‘তেলাপোকা’
হাতপোড়া হানিফ টার্গেট করে। চুরির সম্ভাব্যতা যাচাই করে কামাল। গ্রিন সিগনাল পেলেই দোকান বা অফিসের শাটারের ফাঁক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে রুবেল। পরের পাঁচ মিনিটেই সেরে ফেলা হয় চুরি।
পুলিশ বলছে, তাদের দেখা চুরির এ কৌশল ‘অভিনব’! শুধু চট্টগ্রাম নয়; দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও বাণিজ্যিক এলাকায় শোরুম, বিকাশের দোকান, কাপড়ের দোকান ও বড় মুদির দোকানে চুরি-ডাকাতি করে এ আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্যরা।
শনিবার রাতে নগরের লালদিঘি এলাকার আবাসিক হোটেল তুনাজ্জিনে অভিযান চালিয়ে এ দলের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, ঢাকার গুলশান, মহাখালী, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কুমিল্লা, সিলেট, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম শহরে দীর্ঘদিন ধরে চুরি করে আসছে এ চক্রটি। তারা যেখানে চুরি করতে যায়, ওই এলাকায় বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে।
তিনি জানান, ওই এলাকার শোরুম, বড় কাপড়ের দোকান, বড় মুদির দোকান, বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউটর অফিস, বিকাশের দোকানসহ যেসব প্রতিষ্ঠানে নগদ টাকা লেনদেন হয় বা রাতে ক্যাশে নগদ টাকা থাকে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে তারা। দিনেরবেলা ঘুরে ঘুরে টার্গেট নির্দিষ্ট করে রাতে চুরি করে।
উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান বলেন, এ চোরচক্রের দলনেতা হলো হানিফ ওরফে হাতপোড়া হানিফ (৪০)। চুরির আগে হানিফ সবকিছু রেডি করে। তার হাত বিকলাঙ্গ থাকায় তাকে কেউ সন্দেহ করে না। হানিফ টার্গেট নির্দিষ্ট করার পর চোরচক্রের সেকেন্ড ইন কমান্ড কামালকে খবর দেয়। পুরো চুরির পরিকল্পনা করে কামাল।
টার্গেট করা দোকানে কী পরিমাণ টাকা থাকবে, কীভাবে চুরি করা হবে, চুরির পর দ্রুত সে জায়গা থেকে কীভাবে সরে যাবে, চুরির সময় কী পরিমাণ জনবল লাগবে, কী কী যন্ত্রপাতি লাগবে- এসব পর্যবেক্ষণ করে কামাল। কামালে গ্রিন সিগনাল পেলেই হানিফ চুরির জন্য প্রস্তুতি নেয় এবং সদস্যদের ফোনে খবর দেয়- বলেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, টার্গেট করা প্রতিষ্ঠানে শাটার ছোট হলে তালা ভাঙে আর বড় হলে শাটারের মাঝে ফাঁক করে একজন বা দুইজন ভেতরে ঢোকে। মার্কেটে দারোয়ান থাকলে তাদের দৃষ্টি আড়াল করতে পর্দা, লুঙ্গি, ছাতা ব্যবহার করে। দোকানের ভেতরে প্রবেশ করা সদস্য ২ থেকে ৩ মিনিটের ভেতর ক্যাশ বাক্সের তালা ভেঙে মোবাইল, ল্যাপটপ, টাকা চুরি করে। চুরির পর ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকলে তারা অস্ত্রও সঙ্গে নিয়ে যায়। ধরা পড়লে তারা ব্যবহার করে এসব অস্ত্র।
পুলিশ কর্মকর্তাদের এ বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে কয়েকটি ভিডিও ক্লিপে। এর মধ্যে গত ২৭ জুন নগরের নন্দনকানন এলাকায় লাকি ইলেকট্রিক নামে একটি দোকানে চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে এসেছে।
ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ওই দোকানে চুরির আগে সবকিছু রেডি করে হাতপোড়া হানিফ। পরে দোকানের শাটারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে কামাল। এর পরপরই ওই দলের বাকি সদস্যরা লুঙ্গি, বেডশিট দিয়ে দোকানের সামনের অংশটি ঘিরে ফেলে। এর মধ্যেই দুইজনে শাটার টেনে ইঞ্চি কয়েক ফাঁক করলে ওই দিয়েই দোকানে প্রবেশ করে স্পেশালিস্ট রুবেল। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওই দোকানের নগদ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় চোরের দল।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, দোকানে প্রবেশ করা রুবেল দুই তিন মিনিটের মধ্যে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ক্যাশবাক্স ও লকার ভেঙে ফেলতে পারে। ছোট জায়গা দিয়ে মাথা প্রবেশ করায় সে স্পেশালিস্ট।
তিনি বলেন, চোরচক্রের সদস্যরা চুরির সময় বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে। এর মধ্যে পুলিশকে বলে তেলাপোকা, টার্গেট করা দোকানকে বলে অফিস, তালাকে বলে আম, কার্টারকে বলে গাড়ি, চাদরকে বলে ঠোঙ্গা, দোকানের ভেতর চুরির জন্য যে প্রবেশ করে তাকে বলে অফিসম্যান, সংবাদদাতাকে বলে লাইনম্যান, চুরি করাকে বলে ডিউটি।
এমআরএম/পিআর