মামলাজট আরও বাড়লে মানুষের আস্থা কমবে
দেশের আদালতগুলোতে অস্বাভাবিক মামলাজট আরও বাড়লে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা কমবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার জাস্টিস রিফর্ম অ্যান্ড করাপশন প্রিভেনশন (জেআরসিপি) প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট বাংলাদেশ : ফলাফল উপস্থাপন ও আলোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান মন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, ‘দেশের আদালতগুলোতে ৩১ বা ৩২ কিংবা ৩৩ লাখ মামলা বিচারাধীন। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা কিন্তু অস্বাভাবিক সংখ্যা। তাই এটিকে অবশ্যই কমিয়ে আনতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বহু আগে থেকে প্রবাদ চালু আছে জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড। আর আজকে এ নতুন মাত্রার মধ্যে আর একটা জিনিস যোগ করার প্রয়োজন রয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে, জাস্টিস ডিলেইড শুধু জাস্টিস ডিনাইড না। এখন জাস্টিস যদি ডিনাইড হয়, জাস্টিস কিন্তু বসে থাকে না। স্ট্রিট জাস্টিস চলে আসে। আমরা কিন্তু সেটা চাই না। আমরা চাই জনগণ বিচার পাক।’
তিনি বলেন, ‘জাস্টিস অডিটের তথ্যানুযায়ী দেশের শতকরা ৮৭ ভাগ মানুষের বিচার বিভাগের ওপর আস্থা আছে। আজকের যে ৩১ লাখ মামলার জট সেটা যদি ১০ বছর পর ৬২ লাখে দাঁড়ায় তাহলে কিন্তু এই ৮৭ ভাগ আস্থা কমে ৩৭ ভাগে নেমে আসবে। সে জন্যই আমাদের মামলাজট কমানোর যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে জাস্টিস অডিটের তথ্য এবং অভিজ্ঞ বিচারকদের পরামর্শকে কাজে লাগানো যেতে পারে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘মামলাজট কমানোর লক্ষ্যে সরকার বিদ্যমান আইন সংশোধনসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। মাদক মামলার বিচারের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য এ সম্পর্কিত আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে এবং জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই এ সংশোধন করার চেষ্টা করা হবে। তা নাহলে অধ্যাদেশ আকারে পাস করে এটা চালু করা হবে। এ ছাড়া ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে যুগ্ম জেলা জজের পাশাপাশি সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজকে এসব মামলার বিচার করার ক্ষমতা দেয়া হবে। সে জন্য আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যা খুব শিগগিরই সংসদে পাস হয়ে যাবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘প্রায় ৩২ লাখ মামলার ভারে ন্যুব্জ আমাদের আদালতগুলোতে বিচারপক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা; কারাগারে বন্দি সংখ্যাধিক্য, বিশেষ করে বিচারাধীন বন্দিদের আধিক্য; মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিকরণে বিচারকবৃন্দের ওপর বিপুল চাপের বিষয়ে আমরা সবাই ওয়াকিবহাল। এগুলো সবই আসলে একটি অন্তঃনির্হিত রোগের লক্ষণ যার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল রোগের সঠিক কারণসমূহ শনাক্ত করা।’
‘কারণ আমরা জানি যে, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ যেগুলো বিচারব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম এবং বিচারপ্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। মামলাজট নিরসন বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম অগ্রাধিকার এবং আমরা পদ্ধতিগতভাবে এ জট নিরসন করতে চেয়েছি,’ যোগ করেন আইনমন্ত্রী।
আনিসুল হক আরও বলেন, ‘তাই মামলাজটের কারণসমূহ শনাক্তকরণের পাশাপাশি কোথায় কোথায় মামলাজট রয়েছে তা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিচারাঙ্গণের একটি পূ্র্ণাঙ্গ চিত্র দেখতে আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের কথা চিন্তা করছিলাম। আর তখনই আমরা জাস্টিস অডিট নামের এই ওয়েবভিত্তিক তথ্যভাণ্ডারের কথা জানতে পারি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর ২০১৩ সালে আমরা জার্মান সরকারের সহযোগিতায় দেশের পাঁচটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে জাস্টিস অডিট সম্পাদন করি।’
‘এ নিরীক্ষণের ফলাফল থেকে আমরা ওই পাঁচটি জেলার বিচার ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেখতে পেয়েছিলাম। এ ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে জার্মান এবং ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় আইন মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে দেশব্যাপী ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট সম্পন্ন করে,’ বলেন আইনমন্ত্রী।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জার্মানির ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর বুর্কহার্ড দুকফে, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. জাকির হোসেন, জিআইজেড বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক এবং আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, জার্মান সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশের ‘রুল অব ল’ প্রোগ্রামের প্রধান প্রমিতা সেনগুপ্ত, জাস্টিস রিফর্ম প্রকল্পের ম্যানেজার এটিএম মোর্শেদ আলম প্রমুখ।
আইন মন্ত্রণালয় এবং জিআইজেড যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। অনুষ্ঠানে সারা দেশের সব জেলা জজ ও সমপর্যায়ের বিচারক এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেটরা অংশ নেন।
আরএমএম/এনডিএস/এমকেএইচ