ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

সর্বনাশা মোটরসাইকেল, বাড়ছে গতি কাড়ছে প্রাণ

আবু আজাদ | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ১১:৩২ এএম, ২২ আগস্ট ২০১৯

>> মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি
>> দুর্ঘটনায় আহত-নিহতরা বেশিরভাগই তরুণ
>> সড়কে তাদের থাকে প্রতিযোগিতার মনোভাব

ছয় বোনের একমাত্র ভাই আরজু (২৫)। ঈদের ছুটি শেষে গত মঙ্গলবার কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কথা ছিল এ তরুণ ব্যাংক কর্মকর্তার। সোমবার রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ায় মালবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় তার বোনের স্বামীসহ প্রাণ হারান আরজু। শুধু এই একটি ঘটনা নয়, প্রতিনিয়ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অকাতরে ঝরছে তাজা প্রাণ।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে শুধু গত একমাসে অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৪ জনের। এর বাইরেও প্রতিনিয়তই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাতে হচ্ছে মোটরসাইকেল আরোহী কিংবা পথচারীদের।

গত ১৯ আগস্ট রাতে পটিয়া পৌরসভার আমজুরহাট মোড় এলাকায় মালবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় পুকুরে পড়ে যায় মোটরসাইকেল। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলের ওই আরোহী আরজু ও তার দুলাভাই নিহত হন।

accident

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরের দেওয়ানহাট এলাকায় বাস ও মোটরসাইকেল সংঘর্ষে রতন কুমার দেবনাথ নামে এক যুবক নিহত হন

এ দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ২০ আগস্ট দুপুরে নগরের কদমতলী ফ্লাইওভারের প্রবেশপথে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবকের প্রাণ যায়। এ ঘটনায় আহত অপর মোটরসাইকেল আরোহী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন চট্টগ্রাম মেডিকের কলেজ হাসপাতালে।

চলতি মাসের শুরুতে (৪ আগস্ট) নগরের বারিক বিল্ডিং ও লালখান বাজার এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী তরুণ নিহত হন।

এর আগে গত ২৪ জুলাই নগরের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দুই তরুণ। এভাবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা।

accident

চট্টগ্রামের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে মোটরসাইকেল নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দুই তরুণ

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, গত ঈদুল ফিতরে সারা দেশে মোট ২৩২টি সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে ৭৬টিই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। তাদের হিসাবে মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।

যানবাহন ব্যবস্থাপনা ও সড়ক দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় গাড়ি বা চার চাকার যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেশি। তারপরও বর্তমানে শহরগুলোতে যানজট বেড়ে যাওয়া ও তাৎক্ষণিক সুবিধার জন্য নগরবাসী বেছে নিচ্ছেন মোটরসাইকেল।

গণপরিবহন আইন না মানা, চালকদের দক্ষতার অভাব এবং প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের কারণেই মোটরসাইকেলে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে।

চট্টগ্রাম নগরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই–কর্ণফুলী) মোস্তফা আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, খেয়াল করলে দেখবেন, সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত-নিহতরাই তরুণ বয়সের। তাদের মধ্যে একটা বেপোরোয়া ভাব থেকেই যায়। বাইক দুর্ঘটনার অধিকাংশ ঘটছে দ্রুতগতি, ট্রাফিক আইন না মানা আর একের অধিক যাত্রী নেয়ার কারণে। এ ছাড়া বাইকারদের ওভারটেকিং করা একটা নেশায় পরিণত হয়েছে।

accident

৪ আগস্ট নগরের লালখান বাজার এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী তরুণ নিহত

সড়ক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, পরিবহন সংকট ও যানজটের শহর চট্টগ্রামে দ্রুত আর সহজ যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে মোটরসাইকেলের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। রাইড শেয়ারিং সেবাও এ ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে। মোটরসাইকেল চালকরা সাধারণত অপেশাদার। তারা সড়কের আইন না জেনেই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামেন। এ ছাড়া বর্তমানে তরুণ সমাজের মাঝে মোটরসাইকেলর প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। একের অধিক আরোহী নিয়ে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর ফলেও দুর্ঘটনা ঘটছে।

বিআরটিএ’র হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সারাদেশে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল আছে ২৫ লাখ ১৯ হাজার ২২৬টি। ২০১৭ সালে সারাদেশে তিন লাখ ২৬ হাজার ৫৫০টি মোটরসাইকেল নিবন্ধন দেয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে নিবন্ধন পায় তিন লাখ ৯৫ হাজার ৬০৩টি। আর গত ২৬ মাসে সারা দেশে মোটরসাইকেল নিবন্ধনের হার বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, যানজট, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, নৈরাজ্যসহ ব্যক্তিকেন্দ্রিক সুবিধার কারণে মোটরসাইকেল ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ছোট গাড়ি চলার জন্য আলাদা কোনো লেন নেই। তাই মহাসড়কেও মোটরসাইকেলের মতো বাহনগুলো বাস-ট্রাকের সঙ্গে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে।

তার মতে, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে অবশ্যই সড়ক-মহাসড়কগুলোয় ছোট গাড়ির জন্য আলাদা লেন চালুসহ চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

জেডএ/জেআইএম

আরও পড়ুন