আরও ৫০০ ফ্ল্যাট চায় সংসদ, সরতে হচ্ছে ভেতরে বসবাসকারীদের
সচিবালয়ে কর্মরতদের জন্য আরও ৫০০ ফ্ল্যাট বরাদ্দ চেয়েছে জাতীয় সংসদ। সংসদ এলাকায় বর্তমানে বসবাসরত ৩০টি ফ্ল্যাটের কর্মকর্তাদের তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সংসদে ভিআইপির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বাসাগুলো তাদের অফিস হিসেবে বরাদ্দ দেয়ার জন্য এ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মিত সংসদ সচিবালয় আবাসিক কমপ্লেক্সে অযাচিত স্থাপনা তুলে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান পৃথক চিঠিতে এ নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব ড. জাফর আহমেদ খান বুধবার জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলাকালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে থাকতে হয়। অফিস শেষে ভাড়া বাসায় ফিরতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এ জন্য আরও ৫০০টি বাসা চাওয়া হয়েছে গণপূর্তের কাছে।’
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা আগের তুলনায় তিনগুণের বেশি বেড়েছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে জনবলের তুলনায় বিভিন্ন শ্রেণির বাসার সংখ্যা খুবই কম। সংসদের অধিবেশন চলাকালে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে কর্মরত থাকতে হয়। অফিস শেষে ভাড়া বাসায় ফিরতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সরকারি আবাসন পরিদফতরের পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসে সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীদের জন্য ডি শ্রেণির ২৫০টি, সি শ্রেণির ১৫০টি ও বি শ্রেণির ১০০টি সর্বমোট ৫০০টি নতুন ফ্ল্যাটের চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীদের আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটিতে ৫০০ বাসা দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় এ চিঠি দেয়া হয়।
সরতে হচ্ছে সংসদে বসবাসরত ৩০ পরিবারকে
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ইতোপূর্বে জাতীয় সংসদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে মন্ত্রী দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে মন্ত্রীর পরিবর্তে সংসদ সদস্য সভাপতি হওয়ায় ভিআইপির সংখ্যা আগের তুলনায় ৫০-৬০ জন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সংসদ ভবনে অফিস কক্ষের সংখ্যা একই রয়েছে। অফিস কক্ষের সংকট থাকায় ভিআইপি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য অফিস কক্ষ বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে অবস্থিত মন্ত্রী হোস্টেলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও কয়েকজন মন্ত্রীর অফিস রয়েছে। কাজের গতিশীলতা আনার জন্য তাদের সংসদ ভবনে অফিস কক্ষ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া সচিব/যুগ্ম-সচিব হোস্টেলে ই-টাইপ ও ডি-টাইপের ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বরাদ্দপ্রাপ্ত হয়ে বসবাস করছেন। তাদের অন্যত্র আবাসন সুবিধা দিয়ে স্থানান্তর করে সেখানে অফিস স্থাপন করা অতি জরুরি।
জানা যায়, সচিব/যুগ্ম-সচিব হোস্টেলে বসবাসরত ৩০ জন কর্মকর্তার জন্য ৩০টি ফ্ল্যাটসহ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যে সব কর্মকর্তা এখনও বাসা বরাদ্দ পাননি সে সব কর্মকর্তার জন্য জাতীয় সংসদের নিকটবর্তী মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া/আদাবরে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ নির্মাণাধীন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ই-টাইপের ৫০ টি এবং ডি-১ টাইপের ৫০টি, ফ্ল্যাট এবং পর্যায়ক্রমে আরও ৪০০টি ফ্ল্যাট চাওয়া হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় আবাসিক কমপ্লেক্সে অযাচিত স্থাপনা তুলে দেয়ার নির্দেশ
জানা যায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ৪৪৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগুলো উদ্বোধন করেন। কিন্তু সেখানে বরাদ্দপ্রাপ্ত অনেকেই বসবাস না করে অন্যত্র ভাড়া দিয়েছেন। এদের ভাড়া দেয়া এক ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগও পাওয়া গেছে। আর বেশিরভাগ ফ্ল্যাটেই দেয়া হয়েছে সাবলেট। অন্যদিকে সবুজায়নের জন্য রাখা জায়গা দখল করে নিজেরা থাকা ছাড়াও গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মচারীরা রমরমা ভাড়া বাণিজ্য চালাচ্ছেন। কিন্তু এসব উচ্ছেদ করার জন্য গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারের কাছে সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর ও ২০১৯ সালে ৬ মে আধা সরকারি চিঠি দেয়া হলেও কিন্তু এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে অদ্যাবধি জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে অবহিত করেননি। এ জন্য বিষয়টি জানিয়ে আবার চিঠি দেয়া হয়।
এ বিষয়ে সংসদের সহকারী সচিব (এস্টেট) দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘৫ আগস্ট স্পিকার, চিফ হুইপ এবং হুইপবৃন্দ জাতীয় সংসদ সচিবালয় আবাসিক কমপ্লেক্সটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তারা অত্র আবাসিক কমপ্লেক্সটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানকালে অবৈধ টিনশেড ও ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদের লক্ষ্যে অতি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এরপর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আবার গণপূর্তের সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, সংসদের সিনিয়র সচিব চিঠিতে লিখেছেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ সচিবালয় আবাসিক কমপ্লেক্স সরকারি আবাসন ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক। আবাসিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটির মোট ভূমির পরিমাণ ৫.২০ একর। এ কমপ্লেক্সটির পশ্চিম পার্শ্বে গ্রিন জোন ও ফিউচার এক্সটেনশনের জায়গায় (কমবেশি ১.২০ একর) পিডব্লিউডির স্টাফ ও বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন অবৈধভাবে টিনশেড ও ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছে। এ সব অযাচিত স্থাপনায় অবৈধ মাদকদ্রব্যের ব্যবহারসহ অন্যান্য অসামাজিক কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এ সব টিনশেড ও ঝুপড়ি ঘর সংলগ্ন স্থানে কয়েকটি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে যা আবাসিক কমপ্লেক্সে বসবাসরত বরাদ্দপ্রাপ্তদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বিঘ্ন করাসহ বসবাসের পরিবেশ নষ্ট করছে। এ ছাড়া এ সব অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার কারণে জাতীয় সংসদ সচিবালয় আবাসিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের গ্রিন জোন বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ সচিবালয় আবাসিক কমপ্লেক্সের মূল নকশার (৫.২০ একর ভূমির) অন্তর্ভুক্ত স্থানে অবৈধ টিনশেড ও ঝুপড়ি ঘর আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখের মধ্যে অপসারণ করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে পুনরায় বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় বিদ্যমান সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আপনার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।’
এইচএস/এনডিএস/এমএস