প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবারে মন্ত্রিসভার সায়
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দুপুরের খাবার অন্তর্ভুক্ত করে ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯’ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ নীতির খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘মিড ডে মিল অনেক জায়গায় পাইলট বেসেজে চালু হয়েছে। এগুলোকে কীভাবে সমন্বিতভাবে সারাদেশে ছড়ানো যায় তার জন্য এই নীতিমালা।’
‘এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল বা ইউনিট কাজ করবে। কার্যক্রমের পরিধি সম্প্রসারণে প্রয়োজনবোধে প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি পৃথক জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী, স্কুল মিল উপদেষ্টা কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে সরকার মনোনীত উপযুক্ত ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে এই কমিটি কর্মপরিধি, কার্যকারিতা, অর্থায়ন ও মূল্যায়নে কাজ করবে। সরকার মনোনীত বিশিষ্ট ব্যক্তির সভাপতিত্বে এই কমিটির সদস্যদের নির্দিষ্ট মেয়াদে নিয়োগ দেবে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্কুল মিল কর্মসূচির প্রধান নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।’
শফিউল আলম বলেন, ‘স্কুল মিল কর্মসূচির কার্যক্রমের ধরণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে গাইডলাইন সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তি চাহিদার ক্যালরির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। যা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ৩-১২ বছরের ছেলে ও মেয়ে শিশুদের জন্য প্রযোজ্য হবে।’
তিনি বলেন, ‘অর্ধদিবস স্কুলের ক্ষেত্রে দৈনিক প্রয়োজন অনুপুষ্টিকণার চাহিদা ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করা। এছাড়া জাতীয় খাদ্যগ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তির ১০-১৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে এবং ১৫-৩০ শতাংশ চর্বি থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে। ন্যূনতম খাদ্য তালিকার বৈচিত্র বিবেচনায় নিয়ে ১০টি খাদ্যগোষ্ঠীর মধ্যে ন্যূনতম চারটি খাদ্যগোষ্ঠী নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সহকারী উপপরিচালক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সম্পৃক্ত থাকবেন।
এছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের অংশ হিসাবে কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত থাকবেন।’
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে তিন উপজেলার স্কুলে রান্না করা খাবার এবং ১০৪টি উপজেলায় বিস্কুট খাওয়ানো হচ্ছে। ১০৪টির মধ্যে ৯৩টি উপজেলায় সরকার ও ১১টি উপজেলায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অর্থায়ন করছে।’
তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা দেখেছি যে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে। রান্না করে খাবার দিলে ১১ শতাংশ উপস্থিতির হার বাড়বে। শুধু বিস্কুট দিলে উপস্থিতির হার বাড়ে ৬ শতাংশ। কর্মসূচির আওতাধীন এলাকায় ঝরে পড়ার হার ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং শারীরিক অবস্থারও অনুকূল দেখতে পেয়েছি। রান্না করা খাবার এলাকায় ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং বিস্কুট দেয়া এলাকায় রক্ত স্বল্পতা কমেছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এই বিবেচনায় জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি অনুমোদিত হয়েছে মন্ত্রিসভায়।’
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘একই বিস্কুট বাচ্চারা খেতে চায় না- খাবারের বৈচিত্র বিবেচনায় আমরা বিস্কুট, কলা ও ডিম কমন রাখার চেষ্টা করছি। আর বৃহস্পতিবার অর্ধদিবসে শুধু বিস্কুট রাখব।’
‘শুধু বিস্কুট দিলে প্রতিদিন প্রতি শিক্ষার্থীর ৯ টাকা হারে বছরে ২ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা, পাঁচ দিন রান্না করা খাবার ও এক দিন বিস্কুট দিলে খরচ হচে ৫ হাজার ৫৬০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিস্কুট এবং ডিম, কলা ও রুটি দিলে ২৫ টাকা হারে খরচ হবে ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা হবে। আমরা সব মডেলে চালাব, যেখানে যেটা প্রযোজ্য হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে পরিকল্পনা আছে সব ইউনিয়নে চালাব। ২০২৩ সালের মধ্যে সারাদেশে কাভার করা হবে। সরকারের সঙ্গে স্থানীয় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা ছাড়া সফল করা যাবে না। কারণ স্কুলগুলোতে রান্নাঘর করতে হবে। এজন্য পিপিপি মডেলে করতে পারলে সফল হবে। দেশে ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১৫ হাজার ৩৪৯টি স্কুলের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে খাওয়ানো হচ্ছে। এতে খরচ হচ্ছে ৪৭৪ কোটি টাকা। প্রকল্প চলবে ২০২০ সাল পর্যন্ত।’
এমইউএইচ/জেএইচ/এমকেএইচ