জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভাঙায় আত্মতুষ্টি নয় : মনিরুল
ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, আমরা বলছি তাদের (জঙ্গিদের) সাংগঠনিক কাঠামো বা নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নাই। কারণ বৈশ্বিক, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের আরও বেশ কিছু দিন সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। সেটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলেন, কিংবা গোয়েন্দা সংস্থা বলেন। আসলে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সকলকেই সতর্ক থাকতে হবে।
রোববার দুপুরে হোটেল ওলিও’তে হামলার মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বলেন তিনি।
সাইট ইনটেলিজেন্স এর মতো আন্তর্জাতিক জঙ্গি মনিটরিং সাইট বার বার সতর্ক করছে, হামলার তথ্য দিচ্ছে, হামলার সম্ভাবনার কথাও বলছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, তাদের (আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন) আইডিওলজিতে আকৃষ্ট করতেই মূলত তারা সাইবার স্পেসে প্রতিদিন কোনো না কোনো বয়ান ছাড়ছে। একটিভলি প্রতিদিন বক্তব্যও দিচ্ছে। তাদের রিক্রুট বাড়ানোর জন্য করছে। এসবের কোনো ঘটনাকে আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।
তিনি বলেন, সকল ঘটনা সকল সম্ভাবনাকে সামনে নিয়েই আমাদের জঙ্গিবিরোধী কাজকর্ম চালাতে হবে। যদিও আমরা বলছি তাদের সাংগঠনিক কাঠামো বা নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নাই। কারণ বৈশ্বিক, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের আরও বেশ কিছু দিন সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, হোটেল ওলিওতে হামলাকারী নব্য জেএমবি বিদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলোর মতাদর্শে বিশ্বাস করে। কিন্তু সরাসরি সাংগঠনিক যোগাযোগের তথ্য আমরা তদন্তে পাইনি। তবে জাতীয় শোক দিবসের মতো অনুষ্ঠানে হামলায় সফল হলে তাদের আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সহজ হতো।
আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো তিন ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ফিজিক্যাল ওয়ার্ক যা এখন ইরাক-সিরিয়া, আফগানিস্তান বা কিছুটা কাশ্মীরে হচ্ছে, এরপর ফিলিপিনস কিংবা শ্রীলঙ্কার ঘটনা। আরেকটা হলো আইডিওলজিক্যাল এবং তৃতীয় হচ্ছে, সাইকোলজিক্যাল ওয়ার্ক। সাইকোলজিক্যালি তাদের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করতেই তারা সাইবার স্পেসে প্রতিদিন বয়ান প্রচার করছে।
ঈদ জামাতকে ঘিরে কোনো ধরনের হামলা বা নিরাপত্তা হুমকি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট হুমকি বা হামলার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে আমরা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
হোটেল ওলিও হামলা সম্পর্কে কাউন্টার টেররিজম প্রধান বলেন, তদন্তকালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে হোটেল ওলিও’ ইন্টারন্যাশনালে হামলায় জড়িত বা সম্পৃক্ত ছিল ১৫ জন। যাদের মধ্যে আত্মঘাতি সাইফুলও ছিল। ওই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আকরাম হোসেন নিলয়। তিনিসহ ১৪ জনই গ্রেফতারের পর এখন জেলে। সবাই নব্য জেএমবি’র সদস্য। ১৪ জনের মধ্যে ১০ জন বিজ্ঞ আদালতে কার কী ভূমিকা সে ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। যে কারণে আমাদের এই ঘটনার তদন্ত করতে সহজ হয়েছে। ওই ঘটনার চার্জশিট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী মাস্টারমাইন্ড আকরাম হোসেন খান নিলয়, অর্থ সরবরাহকারী তানভীর ইয়াসীন কবির, আবু তুরাব খান, সাদিয়া হোসনা লাকি, হুমায়রা জাকির নাবিলা ও তাজরীন খানম শুভ।
ওই ঘটনায় বোমা সরঞ্জাম সরবরাহ করে আবুল কাশেম ফকির, লুলু সরদার ওরফে শহিদ মিস্ত্রি, তাজুল ইসলাম ছোটন।
ঢাকার একটি আস্তানায় বোমা প্রস্তুত করে নাজমুল হাসান মামুন। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী ছিলেন সাইফুল ইসলাম (ঘটনার সময় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত)। ওই ঘটনায় আশ্রয়দাতা ও সহায়তাকারী নও মুসলিম আব্দুল্লাহ, কামরুল ইসলাম শাকিল, তারেক মো. আদনান ও আব্দুল্লাহ আয়চান কবিরাজ।
মূল হামলাকারী আত্মঘাতী হয়ে মারা গেছেন। তার পরিকল্পনা ছিল হোটেল ওলিও’র সামনে দিয়ে জাতীয় শোক দিবসে মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে যায়। সেখানে বোমাটি খুব কাছ থেকে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল। আত্মঘাতী নিজেও বুঝতে পেরেছিল মারা যাবে, সেই সাথে যতো লোক মারা যায়।
হোটেলেই বিস্ফোরণের পর ও জড়িতদের গ্রেফতারের পর জানা গেছে, বহু হতাহতেরই পরিকল্পনা ছিল তাদের। বোমা হামলায় সফল হলে অনেক মানুষ হতাহতের সম্ভাবনাই ছিল।
জেইউ/এসএইচএস/জেআইএম