চট্টগ্রামের ডেঙ্গু রোগীরা ঢাকায় আক্রান্ত
রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছেন চট্টগ্রামের পটিয়া জিরি ইউনিয়নের ছেলে মো. সায়েম (২৭)। ঈদ পালনের জন্য এসেছেন নিজ বাড়িতে। শুক্রবার রাতে হাল্কা জ্বর নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। আজ শনিবার বাড়ি ফিরতেই ভর্তি হয়েছেন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। দুপুরে জানা গেছে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত।
শুরু থেকেই আশঙ্কা ছিল, ঈদের ছুটির সময় ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পড়বে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় লোকজনের সম্ভাব্য আনাগোনা বেড়ে যাওয়ার কারণে, এই ঝুঁকির কথা বলছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ গত ২৭ জুলাই ঢাকায় তার দফতরে জ্বর নিয়ে কাউকে বাড়ি না ফেরার পরামর্শ দেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত লোকজনের সিংহভাগই এসেছে ঢাকা থেকে। ঈদুল আজহায় ঢাকা ফেরত জনস্রোতে সে সংখ্যা আরও বাড়বে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, চট্টগ্রামে যেসব ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে, তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ ঢাকায় আসা-যাওয়ার কারণে আক্রান্ত। স্থানীয়ভাবে এডিস মশার কামড়েও ডেঙ্গু হচ্ছে।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, এখানে যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের অধিকাংশ ঢাকা থেকে ফিরে এসে আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার মতো রোগীর সংখ্যা কম। আমাদের ওয়ার্ডে যারা ভর্তি হয়েছেন তারা সবাই শঙ্কামুক্ত। এর আগেও অনেকেই ভর্তি হয়ে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছেন।
এদিকে শনিবার চট্টগ্রামে নতুন আরও ৩০ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮ জন ও বেসরকারি হাসপাতাল ও উপজেলাগুলোতে বাকি ১২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, আজ নতুন ১৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগে থেকে ভর্তি ছিলেন ১০৯ জন রোগী। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৯ জন রোগী। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১১৮ জন।
তবে তিনি মনে করেন না চট্টগ্রামে আক্রান্ত রোগীদের সবাই ঢাকা ফেরত। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীদের আক্রান্তদের সবাই রাজধানী ফেরত, বিষয়টি ঠিক নয়। এ পর্যন্ত যেসব রোগীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের প্রায় ৫০ শতাংশ স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, শনিবার নগরের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ২ জন, বেসরকারি ম্যাক্স হসপিটালে ১ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ৩ জন, মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ২ জন, লোহাগাড়া উপজেলায় ২ জন, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ১ জন ও পটিয়া উপজেলায় ১ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাদে চট্টগ্রামের বাকি হাসপাতালগুলোতে নতুন ১২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০২ ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের তথ্য পেয়েছি আমরা। তবে ঈদে ঢাকা ফেরত কতজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন সে তথ্য এখনও আমরা পাইনি। কয়েক দিনের ব্যবধানে বিষয়টা আরও স্পষ্ট হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের হাতে আসা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে একটা বড় অংশই ঢাকা থেকে ফিরে আসা। তারা কোনো না কোনো কাজে ঢাকায় অবস্থানের পর ফিরে এসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্থানীয় পর্যায়ে যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, ধারণা করা হচ্ছে তাদের পরিবারের অন্য কেউ ঢাকায় গিয়েছে, আর তার সাথেই এ রোগ ছড়িয়েছে। আমাদের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে ঈদে জ্বর নিয়ে কাউকে বাড়ি ঘরে যেতে নিষেধ করেছিলেন। এটি মানা হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সহজ হতো।
আবু আজাদ/এমএসএইচ/এমএস