ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

রাজধানীর পশুর হাটে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা

জসীম উদ্দীন | প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ০৮ আগস্ট ২০১৯

পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ১২টি করে মোট ২৪টি পশুর হাট বসেছে রাজধানীর দুই সিটিতে। এর বাইরে রয়েছে স্থায়ী গাবতলী পশুর হাট। কোরবানির ঈদকে ঘিরে পশুর হাটগুলোতে কোটি মানুষের সমাগমে লেনদেন হয় হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন। বিগত বছরের মতো এবারও পশুর হাটগুলোতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

হাটের শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবার সমন্বিতভাবে কাজ করবে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও এলিট ফোর্স র‌্যাব।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, হাটে যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে হাট ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইজারাদারদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ডিএমপি। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনারদের (ডিসি) সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করার পর এ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।

ডিএমপির নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রত্যেকটি হাটে পুলিশের কন্ট্রোল রুম এবং সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। জাল টাকা শনাক্তে স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসানো হয়েছে ইলেকট্রিক মেশিন এবং প্রজেক্টর। প্রজেক্টরে জাল টাকা ও অজ্ঞান পার্টি থেকে নিরাপদ থাকতে পুলিশের নির্মিত সচেতনতামূলক প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ হাট ও জনসমাগম এবং লেনদেন বিবেচনায় প্রায় প্রতিটিতে ১০০ থেকে ২৫০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। হাট ও হাটের আশপাশে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা। ১০০ ফুট অন্তর বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। দূরবীণ হাতে হাটের সার্বক্ষণিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করছেন পুলিশ সদস্যরা। প্রতিবারের মতো এবারো রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে কোনো হকার বসতে না দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি।

সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নির্বিঘ্নে হাট পরিচালনার জন্য ইজারাদারদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- জোর করে কোরবানির পশু হাটে না নামানো, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে কোরবানির পশু হাটে ঢুকতে না দেয়া, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত হারের বেশি হাসিল (খাজনা) না রাখা, সিটি কর্পোরেশন এবং জেলা প্রশাসক কর্তৃক নির্ধারিত চৌহদ্দির বাইরে পশুর হাট না বসানো, নাইটমোডে ছবি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি স্থাপন, জালনোট শনাক্তে বুথ স্থাপন, নির্ধারিত হাসিলের তালিকা বড় করে ব্যানারে প্রকাশ্য স্থানে লাগানো, হাটে জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখা ও পর্যাপ্তসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা।

এদিকে পশুর হাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তার পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশ ও বাহিরপথে নিরাপত্তা জোরদারের পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএমপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চামড়া পাচারের আশঙ্কায় ঈদের দিন থেকে পরের চার-পাঁচদিন চামড়াবাহী কোনো ট্রাক ঢাকার বাইরে যেতে দেয়া হবে না। তবে ঢাকার বাইরের ট্রাকগুলো ঢাকায় ঢুকতে পারবে। ঢাকার ছয়টি বাহিরপথে পুলিশের কঠোর নজরদারি থাকবে।’

Hat-(3)

রাজধানীর মিরপুর এলাকায় এবার স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীসহ মোট চারটি স্থানে পশুর হাট বসছে। এ এলাকার পশুরহাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের নবনিযুক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘পশুর হাটকেন্দ্রিক সম্ভাব্য যেসব অপরাধ কর্মকাণ্ড হতে পারে সেগুলো আগে আমরা শনাক্ত করে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছি। পাইকার, ক্রেতা-বিক্রেতারা যেন বাইরের খাবার গ্রহণ না করেন এবং সন্দেহভাজনদের আনাগোনা দেখলে যেন তারা দ্রুত পুলিশকে বিষয়টি জানান সেজন্য সতর্ক করা হচ্ছে।’

‘পাশাপাশি যেখানে সেখানে যাতে পশু নামানো না হয়, পশু নিয়ে টানাহেঁচড়া না করা হয় সেজন্যও হাট ইজারাদারদের ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সহায়তায় হাটেই বসানো হয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের বুথ। অজ্ঞান পার্টি মলম পার্টি যাতে কোনো ধরনের সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য হকার পর্যন্ত হাটগুলো ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। যে কোনো ধরনের পুলিশি সহায়তার জন্য পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বিভিন্ন কর্তব্যরত কর্মকর্তার মোবাইল নম্বর-সম্বলিত প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়েছে। তাছাড়া যেকোনো জরুরি সহায়তায় প্রয়োজনে ৯৯৯-এ যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে’, বলেন তিনি।

অন্যদিকে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও হাটকেন্দ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গরুর হাটে নগদ টাকার লেনদেন হয়। সেখানে ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের অস্থায়ী বুথের নিরাপত্তায় সহযোগিতা করবে র‌্যাব।’

র‌্যাবের প্রস্তুতির বিষয়ে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে জোরপূর্বক এক হাটের গরুর ট্রাক অন্য হাটে নিতে বাধ্য করেন, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়, হাটকে কেন্দ্র করে এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার ও অস্থায়ী ক্যাম্প বসানো হয়েছে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এন্ট্রি পয়েন্ট, রেলপথ, নৌপথ ও সড়কপথে র‌্যাব সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে।’

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি সূত্র জানায়, এবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য ২৪টি হাট বসেছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১৪টি। সেগুলো হলো-উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ঝিগাতলা-হাজারীবাগ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর বালুর মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠ-সংলগ্ন আশপাশ এলাকার খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব-সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম-সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনিরআখড়া ও দনিয়া মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ারটেক মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দাওকান্ডি ইন্দুলিয়া ভাগাপুর নগর (আফতাব নগর ইস্টার্ন হাউজিং মেরাদিয়া মৌজার সেকশন-১ ও ২) লোহারপুলের পূর্ব অংশ এবং খোলা মাঠ-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা ও আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার হাটগুলো হলো-উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ ও ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের ফাঁকা জায়গা; ভাটারা (সাঈদ নগর) পশুর হাট; ঢাকা পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের খেলার মাঠ; মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক-সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইন্সের খালি জায়গা; মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা; মিরপুর ডিওএইচএস সংলগ্ন উত্তর পাশের সেতু প্রপার্টি ও সংলগ্ন খালি জায়গা; বাড্ডার ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাবনগর) ব্লক-ই সেকশন-৩-এর খালি জায়গা; কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা ও ভাষানটেক রাস্তার নির্মাণাধীন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অংশ এবং পাশের খালি জায়গায়।

জেইউ/এসআর/এমকেএইচ

আরও পড়ুন