আমি কি মিথ্যা বলেছি? আপনারা বিচার করুন
জেনেভা কনভেনশনে আইনমন্ত্রী দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার, জেলহত্যা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার শেষ করেছি। সব মামলার বিচার শেষ করেছি। সেক্ষেত্রে আমি যদি দাবি করি, বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, সেই পদক্ষেপগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিয়েছে। তাহলে আমি কি মিথ্যা বলেছি? আপনারা বিচার করুন।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষায় বিচারিক পদ্ধতির সক্ষমতা নিয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
গত ৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছিলেন, জেনেভায় জাতিসংঘের সভায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে মিথ্যাচার ও গুম-খুনের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সঠিক তথ্য না দেয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের শপথ ভঙ্গ হয়েছে। তার স্বপদে থাকার অধিকার নেই।
এর জবাবে আইনমন্ত্রী বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৮ সালে ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চারের স্টেট পার্টি হিসেবে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে। এরপর ২০০১ সাল থেকে ওই কমিটিতে (ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার) যে রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল তা গত ২০ বছরেও জমা দেয়া হয়নি। আমরা এবার সেই রিপোর্টটি দিয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, ওই সভায় আমরা গত ৪৪ বছরের মোট সাতটি রিপোর্ট দিয়েছি। ইউনাইটেড নেশনসের চাহিদা অনুযায়ী ওই সব রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। ওই সভায় দেখেছি, ওনারা (ইউনাইটেড নেশনস) যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন, সেগুলো ২০১৩ সাল পর্যন্ত। নতুন কোনো তথ্য তারা সভায় উত্থাপন করতে পারেননি। এ সুযোগে বাংলাদেশের এখনকার বাস্তবতা, বর্তমান অবস্থা, আইনের শাসনের ব্যবস্থা তাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। আমরা দেখেছি, তারা আমাদের রিপোর্টে সন্তুষ্ট হয়েছেন।
‘বাংলাদেশে যা যা ঘটছে, তার একটা সত্য ছবি তাদের কাছে তুলে ধরেছি। বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর কী কী চলেছে, সেটারও তথ্য তুলে ধরেছি। সেভাবে বললে জেনেভার সভাটিকে আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখছি।’
ব্যারিস্টার খোকনের বক্তব্য নিয়ে আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা সবকিছুই জানেন। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার এজাহার (এফআইআর) থাকার পরও কিছু্ হয়নি, এটা কি আইনের শাসন? তারপর জেলহত্যা মামলার একটি এফআইআর হওয়ার পরও কোনো সুরাহা হয়নি। এটা কি আইনের শাসন? ক্লিনহার্ট অপরাশেন কি আইনের শাসন? কোনোটাই আইনের শাসন নয়। আজকে কি আপনারা এমন কিছু দেখছেন?
তিনি বলেন, আমি যদি আজকের এ প্রশ্নগুলো আর এ তথ্যগুলো তুলে ধরি, তাহলে আপনাদের কাছেই আমি বিচার চাইব, আমি সত্য বলেছি নাকি মিথ্যা বলেছি? সেটা আপনারা বিচার করুন।
এর আগে শিশু সুরক্ষায় বিচারিক পদ্ধতির সক্ষমতা নিয়ে ২০১৩ সালের শিশু আইনের ওপর একটি কর্মশালার উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী। এ সময় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আবু সাহেল শেখ মো. জহিরুল হক, যুগ্ম সচিব মো. গোলাম সারওয়ার ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি টমো হোজুমি।
এফএইচ/জেডএ/এমএস