রোদে বসিয়ে মশারি নিতে বাধ্য করা হলো সংসদের কর্মচারীদের
ডেঙ্গুর ভয়াবহতার লালচোখ সংসদ এলাকায় বসবাসকারীদেরও শাসাচ্ছে। তাই সেখানে সচেতনতার নামে ঝাড়ু দেয়ার ফটোসেশনও করা হয়েছে আগের দিন সোমবার (৫ আগস্ট)। কিন্তু আজ মঙ্গলবার যা করা হলো তাতে সংসদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই ক্ষোভে ফুঁসছেন। কেউ কেউ অপমানবোধও করছেন। কারণ বেলা ১১টা থেকে তাদের প্রখর রোধে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। একটি মশারির জন্য বক্তব্য শুনতে হয়েছে ১৭ জনের।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে এই ডেঙ্গু প্রতিরোধী মশারি বিতরণের দীর্ঘ আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এখন মাসটি শ্রাবণ হলেও আকাশে মেঘ নেই। এর পরিবর্তে প্রখর রোদ। এমপিদের প্রতিষ্ঠান পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব আয়োজিত এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ উপস্থিত ছিলেন বিএনপির এমপিরাও। তাদের জন্য শামিয়ানা টানানোসহ সুন্দর ও পরিপাটি করে মঞ্চ তৈরি করা হলেও মশারি নিতে আসাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠাঁঠাঁ রোধে। আর অনুষ্ঠানস্থলে স্পিকার যাওয়ার আগে সেই উন্মুক্ত স্থানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসতে বাধ্য করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
এর আগে সবাই আশপাশের গাছের নিচে ও এর আশপাশে আশ্রয় নেন। কিন্তু তা দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘টনক নড়ে’। সবাইকে মঞ্চের সামনে বসতে বলেন। কিন্তু উপস্থিতিরা রাজি না হওয়ায় একজন ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, ‘ফ্রি মশারি নিতে হলে রোদে বসতে হবে’। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে আইনশ্খৃলা বাহিনীর এক সদস্য বলেন, ‘বসবেন না তা আসছেন কেন’। এরপর বেলা সোয়া ১১টা থেকে স্পিকার মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর বাধ্য হয়ে অনেকে রোধে বসেন। কেউ কেউ আবার চলেও যান। আবার কেউ কেউ বাসায় গিয়ে ছাতা নিয়ে আসেন।
স্পিকারের হাত থেকে মশারি নেয়ার জন্য জন্য ১৭ জনের ‘জ্ঞানগর্ব’আলোচনা এবং সরকার ও স্পিকারের ‘গুণগান’ শুনতে হয়। শুধু কি তাই, বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর রোদে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে মশারি নিতে হয় তাদের।
আয়োজকদের এমন কাণ্ডে উপস্থিতি সংসদ সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এর আগের দিন একই স্থানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কেউ কেউ স্পিকারের মাথায় ছাতা ধরার চেষ্টা করলে তিনি তা সরিয়ে দেন এবং বিরক্তি প্রকাশ করেন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংসদ সচিবালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মধ্যে এক হাজার মশারি বিতরণ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মচারী আক্ষেপ করে বলেন, ‘স্যারদের বক্তব্য শোনাও আমাদের একটা কাজ। কি করব? তবে ডেঙ্গু নিয়ে আমরা সবাই আতঙ্কে আছি। তাই বাধ্য হয়ে রোদে বসতে হয়েছে। আর স্যারদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা ও প্রশংসা শুনতে হয়েছে।’
সংসদের একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ ভবন এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে ডেঙ্গুভীতি চরমে। কারণ এখানে অনেক ফাঁকা জায়গা। আছে লেকও। তাই মশারি বিতরণের অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। কিন্তু এই রোদে এখন নিজেই অসুস্থ।’
মশারি বিতরণের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের সভাপতি চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, হুইপ ইকবালুর রহিম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এ বি তাজুল ইসলাম, বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ, সংসদের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্পিকার ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘এডিস মশা যেহেতু পরিষ্কার, স্বচ্ছ পানিতে বংশ বিস্তার করে, তাই ফুলের টব, ফ্রিজের নিচের পানি, এসির পানিসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এই বিষয়গুলোতে সকলকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংসদের মেডিকেল সেন্টারে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রয়োজনে এখান থেকেও বিনামূল্যে ডেঙ্গুর রক্ত পরীক্ষা করা যাবে।’
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংসদ সদস্যদেরকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকাগুলোতেও ডেঙ্গু প্রতিরোধের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে তারা অনেকেই তাদের নিজস্ব এলাকায় আছেন এবং তারা যাতে এই কার্যক্রম অব্যহত রাখেন সে বিষয়টির প্রতি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। নিজের নির্বাচনী এলাকায় এই কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে বলেও জানান স্পিকার।
এইচএস/এসআর/এমকেএইচ