ডেঙ্গু এতিম করলো ভিকারুননিসার দুই ছাত্রীকে
স্বপ্ন ছিল দুই মেয়েকে অনেক বড় মানুষ করে গড়ে তুলবেন। এ কারণে উচ্চশিক্ষিত হয়েও নিজের ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটেননি মা শিরিন আক্তার (৩৮)। মেয়েদের পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। দুই মেয়েকে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি করান। মায়ের প্রচেষ্টায় দুই মেয়ে ক্লাসে বরাবর প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ডেঙ্গু জ্বর সেই মাকে কেড়ে নিয়েছে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বড় মেয়ে রায়না জেরিন।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বেইলি রোড প্রধান শাখার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রায়না জেরিন। একই শাখায় তার ছোট বোন সুমাইদা অষ্টম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। তাদের বাসা বনশ্রীর তিতাস রোডে। মা শিরিন আক্তার ও বাবা আনিসুল আমিন মিলে একটি সুখের সংসার ছিল তাদের।
বাবা ব্যবসা করেন। মা উচ্চশিক্ষিত হলেও নিজের ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটেননি। দুই মেয়েকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন তিনি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেই মা পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ায় পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। দিনভর বিলাপ করে দিন পার হচ্ছে দুই বোনের।
স্বজনরা জানান, দুই মেয়েকে অনেক বড় মানুষ করে গড়াই ছিল শিরিনের স্বপ্ন। এ কারণে মেয়েদের নিয়েই সবসময় ব্যস্ত থাকতেন তিনি। মেয়েরা কী খাবে, কী করবে, কোনটা তাদের জন্য ভালো হবে- এসব ছিল তার একমাত্র ভাবনা।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় গত ২৮ জুলাই শিরিন আক্তারকে পান্থপথ বিআরবি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সাতদিন তার চিকিৎসা চলে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। গতকাল রোববার দুপুরে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
বড় মেয়ে রায়না জেরিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মা ছাড়া আমরা অসহায় হয়ে গেছি। বাবা সারাদিন কাজে বাইরে থাকেন, মায়ের স্নেহে আমরা বড় হয়েছি। মায়ের চেষ্টায় আমরা দুই বোন শুরু থেকে ক্লাসে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছি। সেই মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, আমাদের আর কোনো অবলম্বন রইলো না।’
মায়ের মৃত্যুতে দুই বোন এখন শোকে পাথর। স্বজনরা নানাভাবে অসহায় মেয়েদের সান্ত্বনা দেয়ার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনোভাবেই শোকার্ত এ পরিবারকে শান্ত করা যাচ্ছে না।
এদিকে দুই শিক্ষার্থীর মা ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুবরণ করায় তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়ার আয়োজন করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে স্কুল শাখায় বিকেলে কলেজ শাখায় দোয়া-মোনাজাত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ফেরদৌসী বেগম।
এই অভিভাবকের অকাল মৃত্যুতে পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এমএইচএম/এসএইচএস/এমএস