১৭০০ টাকার গুঁড়া দুধ এখন ২৭০০!
দেশে উৎপাদিত পাস্তুরিত দুধ কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, সংগ্রহ ও বিপণনে পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ সুযোগে গুঁড়া দুধের আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দেন। কারণ পাস্তুরিত দুধের ওপর সর্বোচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হওয়ায় গুঁড়া দুধের চাহিদা বেড়ে যায়। যদিও পরবর্তীতে হাইকোর্টের পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
পাস্তুরিত দুধের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম বাড়িয়ে দেন। এক মাসের ব্যবধানে বাজারে প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধের দাম বাড়ে প্রায় হাজার টাকা। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা।
তাদের অভিযোগ, তরল দুধে অ্যান্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর উচ্চ আদালত ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত তরল দুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেন। এ সুযোগে বিদেশি দুধের আমদানিকারকরা গুঁড়া দুধের বাজার অস্থির করে তুলেছেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে আমদানি করা গুঁড়া দুধ বেশি দামে বিক্রির অভিযোগের সত্যতা মেলে। এমনই এক ভুক্তভোগী গুঁড়া দুধ ক্রেতা মাসুম মজুমদার। রাজধানীর কচুক্ষেত এলাকার রজনীগন্ধা মার্কেট থেকে নিয়মিত গুঁড়া দুধ কেনেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বৃদ্ধা মা ও তিন বছরের বাচ্চার জন্য প্রতি মাসে দুই প্যাকেট করে গুঁড়া দুধ কিনতে হয়। ১৫ দিন আগে এক কেজি ৭৫ গ্রাম ওজনের নিডো ফর্টিফাইড গুঁড়া দুধের প্যাকেট কিনেছি ১৭০০ টাকা দিয়ে। একই দুধ আজ (রোববার) কিনলাম ২৭০০ টাকায়। ১৫ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে এক হাজার টাকা। কীভাবে সম্ভব! এটা এক ধরনে নৈরাজ্য। দেখার কি কেউ নেই?
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। সীমিত আয় আমাদের। দুধের দাম এক হাজার টাকা বাড়া মানে আমাদের জন্য বড় সমস্যা। দুধের বাড়তি টাকার খরচ মেটাতে অন্য খাতে খরচ কমাতে হবে।
‘ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা মতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, এটি দেখার কেউ নেই। বাজার তদারকি যারা করে তারা তো সরকারের লোক। তারা কি সাধারণ মানুষের কথা বোঝে? দাম বাড়ালে তাদের সমস্যা হয় না, বিপদে পড়ি আমরা, সাধারণ মানুষ। হঠাৎ করে ১৭০০ টাকার দুধ ২৭০০ টাকা আর ২২শ’ টাকার গুঁড়া দুধের কৌটা বিক্রি হচ্ছে ৩২শ’ টাকায়! এটা কি মগের মুল্লুক নাকি!’
রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের গুঁড়া দুধের দাম বেড়েছে। খুচরাপর্যায়ে এক কেজির মার্কস দুধ গত মাসে ছিল ৪৬০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকায়। ৫৯০ টাকার নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডিপ্লোমা ব্র্যান্ডের এক কেজির প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৬১০ টাকায়। এছাড়া ডিপ্লোমা, কোয়ালিটিসহ সব ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা মার্কেটের মুদি ব্যবসায়ী রহমান জানান, দেশে উৎপাদিত পাস্তুরিত দুধ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সুযোগে গত দুই সপ্তাহ ধরে সব ব্র্যান্ডের গুঁড়া দুধের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খুচরায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
গত ১৪ জুলাই এক আদেশে বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ডিটারজেন্টসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান আছে কি-না, তা এক সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা করতে চারটি ল্যাবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ২৮ জুলাই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকায় বিএসটিআইয়ের লাইসেন্সধারী ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণন পাঁচ সপ্তাহের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বাজারে থাকা এসব দুধ কেনা-বেচায় সতর্ক থাকতেও বলেন আদালত। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে কোম্পানিগুলোর পক্ষে আপিল আবেদন করা হয়। পরে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন- বিএসটিআই’র লাইসেন্সপ্রাপ্ত ১৪টি পাস্তুরিত দুধ কোম্পানির উৎপাদন, সরবরাহ, সংগ্রহ ও বিপণনে হাইকোর্টের পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
আরএম/এমএআর/জেআইএম