জনগণের গাড়ি রিকুইজিশন নয় : ফেসবুক লাইভে ডিএমপি কমিশনার
গত চার বছরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কোনো গাড়ি রিকুইজিশন করেনি। আগামীতেও পুলিশ জনগণের গাড়ি রিকুইজিশন করবে না। কারণ সরকার পুলিশের গাড়ি ভাড়ার জন্য পর্যাপ্ত টাকা দেয়।
রোববার (৪ আগস্ট) রাতে ডিএমপির ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে আসেন কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। লাইভে এক নাগরিক পুলিশের গাড়ি রিকুইজিশনের বিষয়ে অভিযোগ করলে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ছেলেধরা সহ বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানোর নেপথ্যে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের তৎপরতা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ছেলেধরা সহ যারা বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ায়, তারা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। স্বাধীনতার পর থেকেই যেমন দেশি-বিদেশি চক্র সক্রিয় ছিল, ঠিক তেমনই একটি চক্র বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তবে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে।
ইতোমধ্যে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, অন্যদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন করতে পুলিশ কাজ করেছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীর সড়কে হিজড়াদের হয়রানি করে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাকে আমি হয়রানি বলব না, এটি গণ-উপদ্রব। যেহেতু তারা সমাজের অবহেলিত মানুষ, সেহেতু বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তবে আইনের মানুষ হিসেবে আমি বলব, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঈদযাত্রায় পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়- ফেসবুকে দর্শকের এমন কমেন্টেসের (মন্তব্য) জবাবে তিনি বলেন, বাস কাউন্টার, রেল স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে ডিএমপিসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্ট রাখা হয়েছে। বাড়তি ভাড়া নিলে অথবা এসির ভাড়া নিয়ে নন এসিতে বসালে আপনারা তাদের কাছে অভিযোগ করুন। তারা ব্যবস্থা নেবেন। এছাড়া সব জায়গায় পুলিশের ক্যাম্প রয়েছে। সেখানেও আপনারা অভিযোগ করতে পারেন।
ঢাকায় সুনির্দিষ্ট কোনো জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, তারপরও আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটসহ অন্যরা কাজ করছেন।
আগামী সপ্তাহে অবসর : ডিএমপি কমিশনার
৩২ বছর পুলিশে চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে আগামী সপ্তাহ থেকেই প্রিয় ইউনিফর্মটিকে মিস করার কথা লাইভে জানান ডিএমপি কমিশনার।
সম্প্রতি শোনা যাচ্ছিল, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া অবসরে যাচ্ছেন। এর মধ্যেই অবসরে যাওয়ার কথা জানালেন তিনি।
ফেসবুক লাইভের শেষের দিকে তিনি বলেন, ৩২ বছর পুলিশের চাকরি করেছি। আগামী সপ্তাহ থেকে আমার প্রিয় ইউনিফর্মটা পরতে পারব না। এটা অনেক কষ্টের। আমি সম্মানিত নাগরিকদের কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষ করে আমি যেসব জেলায় অনেকদিন চাকরি করেছি। তাদের যে ভালবাসা, সমর্থন, সহযোগিতা পেয়েছি তাতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং কৃতজ্ঞ। আমি চেষ্টা করেছি জনগণের জন্য কাজ করার, দেশের জন্য কাজ করার।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের একবিংশ শতাব্দির উপযোগী উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের একটি পুলিশ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা সময়ের দাবি। কোনোভাবে ক্ষমতার দম্ভ নয়, কোনো হয়রানি নয়, বল প্রয়োগের চেষ্টা নয়- ভালো সেবা দিন। ভালোবাসা দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান। আসুন নিপীড়িত, অবহেলিত, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াই। দুর্বৃত্তকে দমন করি কঠোর হাতে। দুর্নীতি থেকে দূরে এসে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা মধ্য দিয়ে এই পুলিশের সম্মানকে আরও উজ্জল করবে।
ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে আছাদুজ্জামান মিয়া সিলেট, সুনামগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, খুলনা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
এআর/এমএসএইচ