দুই সপ্তাহেও সুস্থ হচ্ছেন না ডেঙ্গু রোগী!
সিরাজগঞ্জ জেলার সদর থানার খোকশাবাড়ির বাসিন্দা সুজন (৩০) ও রিপন (২৫)। তারা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন। রাজধানীর মিরপুরের একটি সোয়েটার কারখানার কর্মচারী দুই ভাই একই সঙ্গে জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর বেশি হওয়ায় কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান।
স্থানীয় চিকিৎসকের অধীনে চারদিন চিকিৎসা নিয়েও জ্বর না কমায় সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার করেন।
গত রোববার (২৮ জুলাই) থেকে ঢামেক হাসপাতাল-২ এর পঞ্চম তলায় মেডিসিন ওয়ার্ডে লিফটের পাশে করিডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আগের চেয়ে একটু সুস্থ হলেও দুই সপ্তাহের চিকিৎসায়ও সুস্থ না হওয়ায় চিন্তার ছাপ তাদের মামা মহর আলীর চোখেমুখে।
আজ দুপুরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই সপ্তাহের চিকিৎসায়ও সুস্থ না হওয়ায় তারা ভীষণ চিন্তিত। সুজন ও রিপন একা নন, তাদের মতো আরও অনেক রোগী দেড় থেকে দুই সপ্তাহেও সুস্থ হচ্ছেন না।’
দুপুরে সরেজমিন ঢামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালজুড়ে জ্বরের রোগী। তারা লম্বা লাইন ধরে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। ডেঙ্গু ধরা পড়ার পরে ভর্তি হওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। জায়গা না পেয়ে মেডিসিনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভেতরে-বাইরে, ফ্লোরে, বারান্দা এমনি লিফটের সামনে রোগীরা অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ঢামেক-২ হাসপাতালের পঞ্চম তলায় লিফটের সামনে মাটিতে তিনদিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন সোনারগাঁয়ের বাসিন্দা কাঁচামাল বিক্রেতা আকতার হোসেন ও রোজিনা বেগম দম্পতির ছেলে অনিক। আকতার হোসেন জানান, সপ্তাহখানেক ধরে অনিক জ্বরে আক্রান্ত। সোনারগাঁয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নেয়ার সময় ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসকরা ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দেন। সে পরামর্শ শুনে ঢামেকে ভর্তি করান অনিককে।
তিনি বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে অনিককে আইভি ফ্লুইড স্যালাইন ও তরল শরবতজাতীয় খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তারপরও জ্বর ভালো হচ্ছে না। একদিন ভালো তো আরেক দিন খারাপ।
হাসপাতাল পরিদর্শনকালে দেখা যায়, অতিরিক্ত চাপের কারণে বারান্দা ও করিডোরে ভর্তি রোগীরা গরমে দরদর করে ঘামছেন। অধিকাংশ রোগীর হাতে দেয়া হচ্ছে আইভি ফ্লুইড স্যালাইন।
দুপুর ১টার দিকে নিচতলায় ব্লা্ড স্যাম্পল সংগ্রহ ও বিতরণ কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য জ্বরের রোগীদের কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য রক্ত দিচ্ছেন, আবার কেউ রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য হাসপাতালের কর্মচারীরা মাইক ব্যবহার করে নাম ডেকে রিপোর্ট দিচ্ছেন।
হোসনে আরা নামে এক গৃহবধূর পাঁচ বছর বয়সী ছেলের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। জ্বরাক্রান্ত শিশুটি গরমে দরদর করে ঘামছিল। চিকিৎসকরা বলেছেন, বেড খালি হলে তাকে ভর্তি করানো হবে। চিকিৎসকের অপেক্ষায় সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু দুপুর দেড়টা পর্যন্ত অনিককে ভর্তি করতে পারেননি বলে জানান।
এমইউ/এসআর/এমকেএইচ