এক মশার কামড়ে অসহায় পরিবারের সবাই
‘এক মশার কামড়ে পরিবারের সবার নাওয়া-খাওয়া হারাম হয়ে গেছে। একটা মশার কামড়ে মানুষের প্রাণ হারাতে হচ্ছে, হাসপাতালে গেলে সিট পাওয়া যাচ্ছে না। সন্তানের সুস্থতায় হাসপাতাল হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে। গত সাতদিন ধরে সন্তানকে নিয়ে শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে পড়ে আছে। সন্তানকে আর ফিরে পাবো কি-না তাও জানি না।’
এভাবেই বলতে বলতে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন ডেঙ্গু রোগ আক্রান্ত নাবিল ইবনে হাসানের মা বিনতে মারিয়া বেগম।
বুধবার শিশু হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশু হাসপাতালের ‘এ’ ব্লকের পিআইসিইউ রুমের সামনে মাদুর বিছিয়ে মেঝেতে বসে কাঁদছিলেন মা বিনতে মারিয়া। গত ১৫ দিন আগে তার ছেলের ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। বিভিন্ন হাসপাতালে নাবিলকে ভর্তি করানো হলেও কেউ তাকে সুস্থ করতে পারছিল না। শিশু হাসপাতালে আইসিইউ’র বেড খালি না থাকায় এখানে ভর্তি নেয়া হয়নি। নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে গত সাত দিন আগে এ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সব থাকার পরও আমরা অসহায় হয়ে গেছি। ছেলে আজ ১৫ দিন থেকে চোখ মেলে তাকায় না, আগেই ওর অ্যাজমা ছিল, সেটি আরও বেড়ে গেছে। ওর লিভারে পানি উঠে গেছে বলে ডাক্তার জানিয়েছেন। প্রতিদিন তার শরীরে রক্ত দিতে হচ্ছে। সন্তানের সুস্থতায় সারাদিন চোখের পানি ফেলছেন আর আল্লাহকে ডাকছেন।
এদিকে শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ১০ মাসের আরেক শিশু সিয়াম। বাবা-মাকেও ভালোভাবে ডাকতে পারেন না। গত ২৪ জুলাই তার জ্বর আসে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হওয়ায় গত ২৮ জুলাই আইসিইউতে নেয়া হয়েছে।
সিয়ামের বাবা আজহারুল ইসলাম বলেন, একটি মাত্র সন্তান আমার, ডেঙ্গু জ্বরে এখন আইসিইউতে ভর্তি। সারাদিন স্ত্রী কান্নাকাটি করছে। কাজকর্ম সব কিছু ভুলে পরিবারের সবাই দিনরাত হাসপাতালে পড়ে আছি, কবে সন্তান সুস্থ হবে, তাকে বাড়ি নিয়ে যাব সেই অপেক্ষায় আল্লাহকে ডাকছি। আগের চাইতে তার অবস্থা কিছু ভালো বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ জন শিশু ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বাড়তি চারটি সেল তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডেও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত শিশু রাখা রয়েছে।
শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সাইদ সাফি আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ১৫ জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেলে এখনও ৩০ জন শিশু ভর্তি। বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে জায়গা দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমএইচএম/জেএইচ/জেআইএম