ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নৌকায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে কোনো ভাড়া নেয় না যমুনা চরের মাঝিরা

আবু সালেহ সায়াদাত | সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে | প্রকাশিত: ০২:৩০ পিএম, ৩০ জুলাই ২০১৯

যমুনা নদী পেরিয়ে শেষ সীমানায় দুর্গম চর এলাকা। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। যমুনার মূল নদীতে পানি বেড়ে চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। চরের পুরো এলাকা পানিতে ভাসছে। কিছুদিন আগেও এখানকার ঘরের মধ্যেও ছিল পানি। এটাই সিরাজগঞ্জ সদরের পাশেই চর এলাকার কাওয়াকোলা ইউনিয়ন।

সেখানকার বন্যিচর, খয়াপাড়া, ষোলসন, বেড়াকনা, ছোট কয়ড়া, দোগাছি, বয়ড়া, বড় কয়ড়া-সবই চর এলাকা। কিন্তু এখন যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। পানিবন্দি মানুষের কাছে নেই পর্যাপ্ত খাবার। শুকনো খড়ির অভাবে তাদের একবেলা রান্না হয় তো অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। অসহায়ত্ব নিয়ে জীবন পার করছে এসব বানভাসি মানুষ।

কাওয়াকোলা চরের নির্মাণাধীন আশ্রয় প্রকল্পের জন্য বালু দিয়ে উঁচু করা হয়েছে, আর তার পাশেই ভিড়িয়ে রাখা আছে ছোট ছোট বেশ কিছু নৌকা। এসব চরের মানুষ এক চর থেকে অন্য চর অথবা সিরাজগঞ্জ শহরে যাওয়ার একমাত্র বাহন এই নৌকা। বলা চলে এটি একটি ছোট নৌকার ঘাট। সেখানেই একটি নৌকায় উঠে অপেক্ষা করছে ৪ জন খুদে শিক্ষার্থী। তারা যাবে পাশের চরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারা সবাই ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী। সবার পরনে আছে স্কুল ড্রেস। স্কুল ড্রেস মানে শুধুই নীল রঙের জামা। আর হাতে বই খাতা। তারা সবাই পাশের চরে বন্যি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

Boat

স্কুলে যেতে তাদের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। সেই নৌকায় চড়ে স্কুলের যাওয়ার জন্য তাদের অপেক্ষা। যখন সেই ছোট্ট ঘাটে এসে একটা নৌকা ভিড়ল তখন ওইসব খুদে শিক্ষার্থীরা গিয়ে উঠল নৌকায়। নৌকার মাঝি অন্য যাত্রীদের অপেক্ষায় তখনও নৌকা ঘাটে ভিড়িয়ে রেখেছে। সেই নৌকায় চড়েই কৌতূহলবশত তাদের সঙ্গে আলাপ হয়। আলাপকালে জানা গেল এসব খুদে শিক্ষার্থীরা পাশের চরে বন্যি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। পুরো এলাকাই পানিতে ডুবে থাকায় প্রতিদিন নৌকাতেই যাতায়াত করতে হয় তাদের।

নৌকায় বসে স্কুলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম খাতুন। তার বয়স ১০ বছর, সে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আলাপকালে মরিয়ম বলে, ‘আমরা নৌকাতে করে স্কুলে যাতায়াত করি, কিন্তু তার জন্য নৌকার মাঝিরা আমাদের কাছে ভাড়া বাবদ কোনো টাকা নেয় না। অন্যসব যাত্রীদের কাছে ভাড়া নেয়া হলেও এখানে যারা শিক্ষার্থী তারা ফ্রি যাতায়াত করতে পারে। কোনো মাঝিই ছোট শিক্ষার্থীদের কাছে ভাড়া নেয় না। এতে করে আমাদের খুবই ভালো হয়। কোনো টাকা ছাড়াই স্কুলে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করতে পারি।’

jagonews

সেখানে উপস্থিত চরের আরেক বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ‘চরের সব মানুষ গরিব, হতদরিদ্র। এমনিতেই তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করানোর আগ্রহ কম। কারণ তাদের অভাবের সংসার। এর মধ্যে যারা তাদের সন্তানদের পড়ালেখা করায় তারও তেমন একটা খরচ চালাতে চায় না। তাই সন্তানকে যদি পড়ালেখা করার জন্য স্কুলে পাঠাতে প্রতিদিন ১০-২০ টাকা নৌকা ভাড়া লাগে তাহলে সন্তানদের তারা স্কুলেই পাঠাবে না। তাই চরের মানুষের অভাবের কথা মাথায় রেখে কোনো এসব ছেলে-মেয়েদের কাছে থেকে মাঝিরা ভাড়া বাবদ কোনো টাকা নেয় না। এটা আসলে সবাই করে মানবিক কারণে।

তিনি বললেন, ‘চরের মানুষ গরিব, অসহায়, হতদরিদ্র কিন্তু তাদের মন অনেক বড়।’

যেই নৌকায় চড়ে ওই খুদে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছিল ওই নৌকার মাঝির নাম মোহাম্মদ আলী। তিনি এই চর থেকে অন্য চরে তার ছোট নৌকার মাধ্যমে ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রী আনা-নেয়া করেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে যত নৌকা আছে তারা কেউই ছাত্র-ছাত্রী বা শিক্ষার্থীদের কাছে ভাড়া বাবদ কোনো টাকা নেয় না। অন্য যাত্রীদের কাছে ১০-২০ টাকা ভাড়া নেয়া হলেও তাদেরকে ফ্রি স্কুলের চরে পৌঁছে দেয়া হয়। আর ফেরার পথেও কোনো ভাড়া ছাড়াই আনা হয়। এতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভাবি অভিভাবকরাও খুব খুশি থাকে। আমাদেরও ভালো লাগে এই কাজ করতে।’

jagonews

তিনি বলেন, ‘বিনা টাকায় তাদের যাতায়াত করাতে আমাদের লোকসান হয়। কিন্তু চরের অভাবি মানুষের কথা ভেবে আমরা তা করি আর এটা যদি আমরা না করি তাহলে চরের দরিদ্র পরিবারের এসব ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখাই করা হবে না।’

সিরাজগঞ্জের কাওয়াকোলা ইউনিয়নের এসব চর এলাকায় বানভাসি অসহায় মানুষের মাঝে গতকাল ত্রাণ বিতরণ করে দেশের শীর্ষস্থানীয় নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কম। এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করেছে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। সেখানে প্রায় ২ হাজার পরিবারের মাঝে এ ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

বন্যার্তদের জন্য এবার প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহযোগিতায় প্রায় ২৫ লাখ টাকার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে-চাল, ডাল, মুড়ি, পানি, বিস্কুট, স্যালাইনসহ নানা খাদ্যসামগ্রী।

jagonews

গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় ত্রাণসমগ্রী বিতরণের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে জাগো নিউজ টিম। নীলফামারী ও লালমনিরহাটে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমের পর শনিবার কুড়িগ্রাম জেলায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার গাইবান্ধা জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গতকাল সোমবার সিরাজগঞ্জ জেলার চর এলাকার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে জাগো নিউজের টিম।

জাগো নিউজের এবারের ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম দলে ছিলেন জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিয়াউল হক, জাগো নিউজের সহকারী বার্তা সম্পাদক মাহাবুর আলম সোহাগ, ওয়েব ইনচার্জ হাসিবুল হাসান আশিক, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফয়সাল খান ও নিজস্ব আলোকচিত্রী মাহবুব আলম।

এএস/এসআর/এমকেএইচ

আরও পড়ুন