‘এভাবে বেঁচে থাকা কঠিন’
ছোট্ট ছোট্ট শরীর। কেউ সারাবেলা ছুটে চলছে, কেউ ভালো করে কথা বলতেও পারে না আবার কেউবা হাঁটতেও পারে না। কেউ কেউ জানেও না, ডেঙ্গু কী? অথচ শিশুরা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে ইতোমধ্যে এক শিশু মারাও গেছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু, পুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ মুয়াজ রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে বলেন, ‘গতকাল শনিবার আমাদের এখানে ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করেছি। ওই মুহূর্তে হাসপাতালটিতে ৯৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে।’
শুধু এই শিশু হাসপাতালেই নয়, ঢাকা শহরের হাসপাতালগুলোর চিত্র প্রায় একই। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি আরও খারাপ। অন্যদিকে ঢাকা ছাড়াও এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ঢাকাবাসী। তারা নিতান্ত বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছেন সরকারের কাছে।
তবে ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক সৈয়দ সফি আহমেদ মুয়াজ আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে গর্ভবতী মা ও সদ্যজাত শিশুর প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা যেহেতু বলতে পারে না সেজন্য অনেকে একটু দেরিতে বোঝে। সে জন্য রোগীর অবস্থা অনেক সময় খারাপ হয়ে যায়। আমাদের মা ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে।’
ডেঙ্গুকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করা উচিত
ঢাকা শিশু হাসপাতালে রোববার (২৮ জুলাই) সকালে ৯ বছর বসয়ী ডেঙ্গু আক্রান্ত জারিফা জাহান নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে জারিফার মামা সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ‘জারিফাকে গত বুধবার এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকেই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। আজ (রোববার) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সে মারা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুকে সরকারের মহামারি ঘোষণা করা উচিত। ডেঙ্গু এখন আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।’
এভাবে বেঁচে থাকা কঠিন
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা চিকিৎসার পর সুস্থ হয়েছেন তারাও আবার আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে রয়েছেন। এমন একজন মা হাসিনা আক্তার। রাজধানীর ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে তার বাসা। তার পাঁচ বছর পাঁচ মাস বয়সী মেয়ে নুসাফাচিন মুসনাম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গুর বিশেষ সেলে ভর্তি।
হাসিনা আক্তারের অভিযোগ, ‘গত বছর মশা মারার ওষুধ দেওয়া হলেও এ বছর ওষুধ দেওয়া হয়নি। আগের চেয়ে আমাদের ওখানে এখন মশাও অনেক বেশি। অনেক সময় ঘরে টেকাও কঠিন। আগে থেকেই সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনের ওষুধ দিলে হয়তো এতটা ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।’
মুসনামের ছোট তার আরেক সন্তান রয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত মুসনামের সঙ্গে থাকতে গিয়ে ছোট সন্তানের ঠিকমতো খবর রাখতে পারছেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন হাসিনা আক্তার। তার অসহায় উক্তি, ‘আমরা যেন সবাই ভালোভাবে বাঁচতে পারি। বেঁচে থাকা তো আমাদের অধিকার। কিন্তু এভাবে বেঁচে থাকা তো কঠিন।’
শিশু হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করানোর আগে আরও দুই হাসপাতালে গিয়েছিলেন হাসিনা আক্তার। তিনি জানান, এতে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে।
কখন বাড়ি ফিরবে
৯ বছর বয়সী বারহান ইসলাম রাসেল। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে থাকে। সারাক্ষণ ছুটে বেড়াত। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আটদিন ধরে এ হাসপাতালে ভর্তি। এখন তার অবস্থা ভালোর দিকে। তবে সে অস্থির হয়ে পড়েছে, কখন বাড়ি ফিরবে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে রাসেলকে নিবৃত করে পাশে বসে থাকা তার নানি রেহানা বলেন, ‘বাড়িতে গেলেই তো আবার দৌড়াবি। এত ছোটাছুটি করা যাবে না। তাহলে আবার ডেঙ্গু হবে।’ ডেঙ্গু আতঙ্কিত শিশু রাসেল নানির কথায় মাথা নেড়ে সায় দেয়।
ডেঙ্গু নিয়ে যা বলছেন শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক
ডেঙ্গু সেল, ওয়ান স্টপ সেন্টার ও ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ঢাকা শিশু হাসপাতালে। হাসপাতালটির শিশু, পুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ সফি আহদে মুয়াজ বলেন, ‘আমাদের অসচেতনতা আছে। আমরা বুঝতে পারি না যে, শিশুর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথমেই বুঝতে পারি ডেঙ্গু হয়েছে, সেভাবে যদি খেয়াল নেই, তাহলে মৃত্যু হবে না। যারা মারা যাচ্ছে, তারা যদি আগেই হাসপাতালে যায়, তাহলে মৃত্যুর হার বাড়বে না।’
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু হলে পানিজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড আসে ডেঙ্গু জ্বর কমার পরে। সে সময় আপনাকে সচেতন থাকতে হবে। আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী চললে খারাপ কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান চিকিৎসক সফি আহমেদ মুয়াজ।
পিডি/আরএস/জেআইএম