স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছেন ডা. প্রাণ গোপাল
স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই দুইবারের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি), প্রখ্যাত নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। সোমবার সকালে সশরীরে নাক, কান ও গলা বিভাগে হাজির হয়ে বর্তমান বিভাগীয় চেয়ারম্যান যিনি একাধারে তার ছাত্র-অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদারের মাধ্যমে পদত্যাগ ও স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদনটি ভিসি কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেবেন।
রোববার রাত ৯টায় জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে সাবেক এই ভিসি এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ থাকলেও তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন না ভিসির পদ থেকে নেমে আবার বিভাগে ফিরে যাওয়া উচিত।
তাছাড়া তিনি বিভাগে ফিরে গেলে তার হাতেগড়া যে ছাত্র যিনি বর্তমানে চেয়ারম্যান আছেন তাকে হয়তো সরে যেতে হবে। তিনি বহুদিন পর চেয়ারম্যান হয়েছেন তাই জুনিয়রকে সুযোগ করে দিতেই তিনি আর বিভাগে ফিরে যাবেন না। বর্তমানে ইএনটিতে যে যেখানেই চাকরি করছেন সবাই তার ছাত্র বলে জানান।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর চাকরি জীবন পার করেছেন। সুদীর্ঘ জীবনে মেডিকেল অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার, রেজিস্ট্রার, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক হিসবে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চাকরি করেছেন।
তদানীন্তন পিজি হাসপাতালে এবং পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার এবং সর্বশেষ ভিসি হিসেবে ছয় বছর কাজ করেছেন। গত কয়েকদিন যাবত প্রাণ গোপাল দত্ত আর বিভাগে ফিরে যাবেন না, চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাবেন এমন জোরগুঞ্জন চলছিল।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসানের কাছে সাবেক ভিসির পদত্যাগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যাচ্ছেন এবং পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে শুনেছি। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেননি বলে মন্তব্য করেন।
জানা গেছে, ভিসি হিসেবে দুই মেয়াদে ছয় বছর সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পর গত ২৪ মার্চ বর্তমান ভিসির কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করে ছয় মাসের শিক্ষা ছুটিতে যান ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।
২০০৯ সালের ২৫ শে মার্চ ভিসি হিসেবে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব নেবার পরেই তিনি বলেছিলেন, তিন বছর মেয়াদ শেষে তিনি আর নিজ বিভাগে ফিরে যাবেন না। পরবর্তীতে সরকার তার তিন বছরের পারদর্শিতা ও দক্ষপরিচালনা বিবেচনা করে আরো তিন বছরের জন্য (২০১২-২০১৫) ভিসি হিসেবে পুনঃনিয়োগ দেয়। এ কারণেই সে সময়ে তার পদত্যাগ করা হয়নি।
প্রথমবার ভিসি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছিলেন, চিকিৎসক ও শিক্ষক হিসেবে ১৯৭৭ থেকে ২০০৯ সাল দীর্ঘ তেত্রিশ বছরের অর্জন ভিসি হিসেবে বিসর্জন দেবেন না। এরই অংশ হিসেবে এই অবসরগ্রহণ।
কোনো প্রকার অভিমান নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জীবনে অনেক সাফল্য ও মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, অভিমান নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
তার মতো দক্ষ ও অভিজ্ঞ অধ্যাপকের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় প্রয়োজন আছে এমন কথা বললে তিনি বলেন, সরকার যদি আমাকে কোনো দায়িত্ব দেয় তাহলে আমি সেখানে যেতে প্রস্তুত।
সোমবার অবসরে গেলেও গত ছয়মাস যাবতই তিনি বিএসএমএমইউ থেকে বিছিন্ন। কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন এবং কাটাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবসরে যাওয়ার আগে থেকে তিনি সাভার পিএটিসি, এনডিসি, নীলক্ষেত প্ল্যানিং একাডেমি, বিয়াম, সারদা পুলিশ একাডেমি, স্টাফ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে লেকচার ও ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান।
এমইউ/বিএ