ডেঙ্গু দমনে এবার আসছেন আন্তর্জাতিক মশা বিশেষজ্ঞ!
‘মশা মারতে কামান দাগানো’ প্রচলিত এ প্রবাদটি কমবেশি সবারই জানা। ক্ষুদ্র ও নিরীহ প্রাণী মশা মারতে কামানের গোলার ব্যবহার রূপক অর্থে বহুল প্রচলিত। কিন্তু এবার সত্যি সত্যি ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা দমনে আন্তর্জাতিক মশা বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সফরে আসছেন।
চলতি সপ্তাহে কিংবা আগামী সপ্তাহের মধ্যেই কমপক্ষে দুইজন আন্তর্জাতিক মশা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ সফরে আসছেন এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের একজন আসছেন যুক্তরাজ্যের লন্ডন এবং অপরজন প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে।
লন্ডন থেকে যিনি আসছেন তিনি ‘ইনোভেটিভ মসকিটো’র উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান ‘অক্সিটেক’র শীর্ষ কর্মকর্তা। অপরজন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয় (ভারত) থেকে আসছেন। তিনি একজন রোগতত্ত্ববিদ।
সম্প্রতি এডিস মশার প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ও হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে দুজন মশক বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ করে আনা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, এ মুহূর্তে মশকনিধন ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। যেকোনো উপায়ে এডিস মশা নিধন ও নির্মূলের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এ বিষয়টি চিন্তা করেই এ দুজন বিশেষজ্ঞকে দাওয়াত করে আনা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে সন্তুষ্ট হলে সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে মশকনিধন ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লন্ডনের অক্সিটেক নামক প্রতিষ্ঠানটি গবেষণার মাধ্যমে এক ধরনের পরিবেশবান্ধব মশা উৎপাদন করে। সেগুলো ডেঙ্গুবাহী এডিস (স্ত্রী) মশার সঙ্গে মেলামেশার মাধ্যমে নতুন মশার প্রজনন ঘটায়। নতুন জন্ম নেয়া মশা দুই সপ্তাহ পর এমনিতেই মরে যায়। পরবর্তীতে যত মশা জন্মাবে সেগুলো ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা হয়ে জন্মাবে না, ‘ভদ্র মশা’ হয়ে জন্মাবে। তবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় পাঁচ মাস লেগে যায়।
অক্সিটেক নামক প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ইনোভেটিভ মশার মাধ্যমে সাফল্য শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ। ওই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা করে সন্তুষ্ট হলে লন্ডন থেকে মশা আমদানি করা হতে পারে বলে জানা গেছে। অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে মশকনিধনে কীভাবে সহায়তা করবে তার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ রোগতত্ত্ববিদ পাঠাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি দুজন বিশেষজ্ঞের বাংলাদেশ সফরের কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত কিছু এ মুহূর্তে বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে চলতি বছরে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫২৮ জন ডেঙ্গু রোগী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন; এটি নতুন রেকর্ড। গতকাল শনিবার (২৭ জুলাই) পর্যন্ত গত ২৭ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি কিছু রোগীর সংখ্যা আট হাজার ৩৮৪।
এমইউ/বিএ/পিআর